অন্যান্য টপিক

আল-ওয়াদুদ الودود Al-Wadud

আল-ওয়াদূদ (প্রেমময়, পরম স্নেহশীল)[1]:

আল-ওয়াদূদ হলেন ভালোবাসাকারী ও ভালোবাসিত অর্থাৎ প্রেমকারী, প্রেমময় ও প্রেমকৃত।[2] তিনি তাঁর নবী, রাসূল ও তাদের অনুসারীদেরকে ভালোবাসেন, আবার তারাও তাঁকে ভালোবাসেন। তিনি তাদের কাছে সর্বাধিক প্রিয়। তাদের অন্তরসমূহ তাঁর ভালোবাসায় পূর্ণ, তাদের যবান তাঁর প্রশংসায় মত্ত, সব দিক থেকে তাঁর ভালোবাসা পাওয়া, ইখলাস ও নৈকট্য লাভে তাদের অন্তর সর্বদা আকর্ষণ করে।[3] আল্লাহর নির্বাচিত প্রিয় বান্দাদের তাঁর প্রতি ভালোবাসা অন্যের ভালোবাসার সাথে বাস্তবতা, ধরণগত ও এর সম্পৃক্ততার দিক থেকে কোন ভাবেই তুলনা করা চলে না। আল্লাহর ভালোবাসা বান্দার অন্তরে থাকা ফরজ, তাঁর ভালোবাসা সব কিছুর ঊর্ধ্বে ও অগ্রগণ্য এবং অন্যদের ভালোবাসা তাঁর ভালোবাসার অনুগামী হতে হবে।

আল্লাহর ভালোবাসা সমস্ত কাজের মূল, সব বাহ্যিক ও গোপন ইবাদত তাঁর ভালোবাসা থেকেই উৎপত্তি। রবের প্রতি বান্দার ভালোবাসা তার রবের অশেষ দয়া ও ইহসান, যা বান্দার সাধ্যে ও শক্তির বাইরে। তিনিই বান্দাকে তাঁকে ভালোবাসতে তাওফিক দেন, ফলে তিনি বান্দার অন্তরে ভালোবাসা ঢেলে দেন, অত:পর বান্দা যখন তাঁর তাওফিকে তাঁকে ভালোবাসেন তখন তিনি তাদেরকে আরেকটি ভালোবাসার পুরস্কার দান করেন। এটি প্রকৃতপক্ষে বান্দার প্রতি আল্লাহর একান্ত ইহসান। কেননা তাঁর থেকেই ভালোবাসার কারণ এবং তাঁর থেকেই ভালোবাসার উপাদান। এখানে আরেকটি ভালোবাসা তাঁর ভালোবাসার সাথে সাংঘর্ষিক নয়; বরং এটি তাঁর শুকরকারী বান্দাদের শুকরিয়ার কারণে তাদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা। অত:এব, যাবতীয় কল্যাণ বান্দার দিকেই ফিরে। আল্লাহ মুমিনের অন্তরে ভালোবাসা ঢেলে দেন, অত:পর তিনিই তা তাদের অন্তরে লালনপালন করে বৃদ্ধি করেন, এমনকি তা তাঁর নির্বাচিত প্রিয় বান্দাদের অন্তরে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করে যে, তাদের কাছে তিনি ব্যতীত অন্যের ভালোবাসা ক্রমশ: কমতে থাকে, প্রিয়জনদের থেকে শান্তনা পায়, তাদের কাছে দুনিয়ার যাবতীয় বালা-মুসিবত তুচ্ছ মনে হয়, আনুগত্য ও ইবাদতের কষ্ট তাদের কাছে সুখকর মনে হয়, তাদের নানা ধরণের কারামত দেখা যায়, এর সর্বোচ্চ কারামত হলো আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনে সফলতা এবং তাঁর  নৈকট্য লাভে তাঁর কোমলতা অর্জন। অত:এব, বান্দা তার রবকে ভালোবাসলে সে তার রবের দুটি ভালোবাসায় সিক্ত হয়। তার রবের ভালোবাসা তাকে তার রবের প্রিয়জন বানায় এবং আল্লাহর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তাঁর শুকরিয়া স্বরূপ তাঁকে ভালোবাসলে তখন সে তাঁর নির্বাচিত মুখলিস বান্দা হয়ে যায়। বান্দা তার রবের ভালোবাসা অর্জনের সর্বোত্তম পন্থা হলো, বেশি পরিমাণে তাঁর যিকির করা, তাঁর প্রশংসা করা, তাঁর কাছে বেশি বেশি ফিরে আসা, প্রার্থনা করা, তাঁর উপর তাওয়াক্কুল করা, ফরয ও নফলের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করা, কথা ও কাজে তাঁর ইখলাস অর্জন করা এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সর্বাবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ٣١﴾ [ال عمران: ٣١]   

“বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১] [4]


[1] এ নামের দলিল হলো আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী,

﴿وَهُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلۡوَدُودُ١٤﴾ [البروج: ١٤]

আর তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, প্রেমময়। [সূরা আল-বুরূজ, আয়াত: ১৪]

[2] আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৬৯।

[3] আত-তাফসীর, ৫/৬২৬।

[4] আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৬৯-৭০; তাওদীহুল কাফিয়া আশ-শাফিয়া, পৃ. ১২৪-১২৫।

]]>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker