অন্যান্য টপিকইসলামিক খবরইসলামিক ঘটনাইসলামিক ছবি

ইসলামিক গল্প পড়ি জিবন টাকে সুন্দর করি –

কোন কলেজ….?

-…………সরকারী কলেজ।

-হুম। এডমিট দাও। আর নেকাব টা খুলো।

– সরি ম্যাম। নেকাব খুলতে পারবো না। (এডমিট দিতে দিতে)

– কেন…? নিকাব খুললে কি সমস্যা..?

– ম্যাম..এখানে অনেক ছেলে আছে।

– তো…?

– ম্যাম..নিকাব খুললে পর্দার হুকুম লঙ্গন হবে।

– শুনো… এতো হুজুরগীরি দেখাতে এসো না। আসল কথা বলো। কোন প্রক্সি দিচ্ছে না তো…?

– জ্বী না ম্যাম। আপনি চাইলে আমাকে আলাদা রুমে নিয়ে আমাকে চেক করতে পারেন।

– সব রুমে পরিক্ষা চলছে। তাছাড়া আমার এত সময় ও নেয়। তারাতারি নিকাব খুলো অন্যদের খাতা সাইন করতে হবে।

– ক্ষমা করবেন ম্যাম। আমি নিকাব খুলতে পারবো না।

– তাহলে আমিও তোমার খাতা সাইন করবো না।

– (চুপ)

– এই মেয়ে নিকাব টা একটু খুলে দেখিয়ে দাও না।ইসলাম এতটা কঠোর না। জানো না অনেক সময় একটু আকটু ছাড় দেওয়ার অনুমতি আছে।( অন্য হল গার্ড)

– জ্বী ম্যাম। ইসলামে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার অনুমতি আছে। যেমন মরুভুমিতে খাদ্যের অভাবে কেউ যদি মারা যাবে মারা যাবে এমন অবস্থায় পৌছায় তখন বাচার তাগিদে হারাম খাদ্য খাওয়া জায়িজ। তবে ঐ পরিমাণ খাওয়া বৈধ যে পরিমাণ খেলে মোটামুটি বাচতে পারবে। এখন আপনি যদি পর্যাপ্ত খাওয়া থাকা সত্ত্বেও আপনি হারাম খাবার গ্রহণ করেন তাহলে তো তা জায়িজ হবে না। ম্যাম চাইলেই আমাকে অন্য রুমে নিয়ে নিকাব খুলে চেক করতে পারে।তাই এখানে আমি নিকাব খুলতে পারবো না।

– এই তোমাদের এই একঘেয়েমি ইসলামের বেশি ক্ষতি করছে।

– জ্বী না ম্যাম ভুল বলছেন। বরং আপনাদের এই ছাড় দেওয়ার মানুষিকতাই ইসলামের বেশি ক্ষতি করছে। ছাড় দিতে দিতে পুরো সমাজ থেকে আপনারা আর ইসলামের কিছু বাকি রাখেন নাই। পুরো ইসলাম টাই সমাজ থেকে করে দিছেন।

– তাহলে তুমি নেকাব খুলছো না..?

-জ্বী না ম্যাম। আমি এখানে নিকাব খুলতে পারবো না।

– ঠিক আছে আমি দেখছি আজ তোমার খাতায় কিভাবে সাইন হয়।

কথাটি বলেই ম্যাম সায়মার খাতা টি রেখে পিছনের সীটে খাতা সাইন করতে চলে যায়। সায়মা আল্লাহকে কয়েকবার স্মরণ করে আবার লিখায় মন দেয়।

দেখতে দেখতে পরীক্ষার সাড়ে ৩ ঘন্টা পার হয়ে গেলো।হলের সবাইর খাতা সাইন হলেও সায়মার খাতায় সাইন হয় নি। সায়মা বার বার আল্লাহকে স্মরণ করে। সায়মার বিশ্বাস আল্লাহ নিশ্চয় কিছু একটা ব্যবস্থা করবে।

– এখনো সময় আছে তারাতারি নিকাব খুলে চেহারা দেখাও না। না হয় তো ম্যাম সাইন করবে না।

– ম্যাম আমি তো বললাম আলাদা রুমে উনাকে আমি নিকাব খুলে দেখাতে রাজি আছি।এখানে ছেলেরা আছে আমি দেখাতে পারবো না।

– আরে নিকাব না খুললে ম্যাম সাইন করবে না।আর খাতায় সাইন না হলে তো খাতা কাউন্ট হবে না।

থাক ম্যাম। খাতা কাউন্ট না হলে নাই। প্রয়োজনে পরের বছর আবার দিবো।তারপরেও আমি নিকাব খুলতে পারবো না।

– এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে তুমি একটা বছর লস দিবে..?

– ম্যাম এটা মোটেও সামান্য ব্যাপার না। এটা আল্লাহর হুকুম। আর সব কিছুর আগে আমাকে আল্লাহর হুকুমকে প্রাধান্য দিতে হবে। যাক না আমার এক বছর… তাতে কি..? এতে যদি আল্লাহ আমার উপর রাজি খুশি হয়।

– এই মেয়ে এত পাকামো দেখাতে হবে না। দাও খাতা দাও সাইন করে দিই।

– থ্যাংকস ম্যাম।

পরিক্ষারর সময় শেষ হলে খাতা জমা দিয়ে সায়মা আল্লাহর শোকর আদায় করে হল থেকে বের হয়।

এইভাবেই প্রতিদিন সায়মার তার নির্ধারিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। কোন কোন দিন হল গার্ডরা বাধা হয়ে দাড়ায় কোন কোন দিন বিনা বাধায় পরীক্ষা শেষ করে। তবে হল গার্ডের সামনে বাধাপ্রাপ্ত হলেও কোনদিন সে পরীক্ষার হলে নিকাব খুলে নি।

আজ পরীক্ষার শেষ দিন।সায়মার আজ আসতেই একটু দেরী হয়ে গেছে। হলে ডুকতেই ১০ মিনিট দেরী হয়ে যায়। তারাতারি খাতা নিয়ে সায়মা রুল, রেজিস্ট্রেশন,বিষয় কোড পূরণ করে লিখা শুরু করে। আজ পূর্বের এক শিক্ষক হল গার্ডে থাকায় সায়মার আর সমস্যা হয় নি।

নির্ধারিত সময়ের ভিতর ভালোভাবে পরীক্ষা দিয়ে খাতা জমা দিয়ে আল্লাহর শোকর আদায় করে সায়মা হল থেকে বের হয়।

– এই যে আপু…?

সায়মা পিছনে তাকিয়ে দেখে তার মতো পুরো কালো কাপড়ে ( বোরকা,নিকাব,হাত মৌজা) আবৃত একটা মেয়ে।

– আমাকে বলছেন।

– জ্বী আপু। থ্যাংকস।

– থ্যাংকস… কেন.?? তাছাড়া আমি তো আপনাকে চিনি না।

– আপু। আমি সালমা।……………. কলেজে পড়ি। আপনার পশের সীটের পিছনের সীটেই আমার সীট ছিল।

– ও আচ্ছা। তা বোন থ্যাংকস কেন দিলেন.? তাছাড়া আমাদের হলে তো আমি ছাড়া আর কাউকে বোরকা পরিহিত দেখি নাই।

– ঠিক বলছেন আপু আমাদের হলে শুধু আপনি বোরকা পড়ে আসতেন।আজ আমি সহ দুইজন হলো।

– আলহামদুলিল্লাহ। তা বোন এতদিন কেন পড়ে আসেন নিই। হল গার্ডের ভয়ে..?

-আসলে আপু আমি কিন্তু মোটেও এমন ছিলাম না। এটাই আমার প্রথম বোরকা।

– সত্যি…?

– আসলে আপু দীর্ঘদিন থেকেই নিজেকে চেঞ্জ করবো করবো ভাবছি। কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না। বাসা থেকেও সাপোর্ট পাবো কিনা ভয়ে ছিলাম। কিন্তু প্রথম পরীক্ষার দিন আপনার দৃঢ় আচরণ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমাকে সাহস জুগিয়েছে। প্রথম দিন পরীক্ষার হলেই সিদ্ধান্ত নিলাম না আর এভাবে চলবো না। নিজেকে পরিবর্তন হতেই হবে। তাই পরীক্ষা থেকে বাসায় যাওয়ার পথেয় বোরকার কাপড় কিনে নিই।তারপর তা সিলাই করতে দিই। গতকাল হাতে পেলাম আর আজ গায়ে দিয়ে পরীক্ষা দিতে চলে আসলাম। সত্যি আপু এটা গায়ে দেওয়ার পর নিজেকে অনেক সম্মানী সম্মানী মনে হয়।

– আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আপনাকে দ্বীনের বুঝ দিয়েছেন। আল্লাহর শোকর আদায় করেন।

– আলহামদুলিল্লাহ। আসলে আপু ঐদিনে আপনার দ্বীনের উপর অটল থাকাটাই আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে।নিজেকে পরিবর্তনে সাহস জুগিয়েছে। তাই আপনার একটা থ্যাংকস প্রাপ্ত। তাই আপনাইকে আবার বলছি থ্যাংকস।

– আলহামদুলিল্লাহ । থ্যাংকস বলতে হবে না। দ্বীনের উপর অঠল থাকুন। আর আমার জন্য দোয়া করুন।

– দোয়া তো আপু মন থেকেই এমনিতেই আসে। বিশ্বাস করেন আপু প্রতিটা মোনাজাতে আপনার জন্য মন থেকে এমনেই দোয়া চলে আসে।

-আমিন ( মনে মনে) আচ্ছা বোন আজ তাহলে আসি। ইনশাআল্লাহ বেচে থাকলে আবার দেখা হবে।

– ইনশাআল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker