উহুদের যুদ্ধ পার্ট ১৫
মুসলিম সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে খালিদ বিন ওয়ালিদের কৌশল নির্ধারণ
-
এরূপ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কঠোর আদেশ এবং সেনাপতির নিষেধ অমান্য করার ফলও ফলতে শুরু হল। আরবের বিখ্যাত বীর এবং রণকুশলী সেনাপতি খালিদ ইবনু ওয়ালীদ ঘোড়সওয়ার সেনাদল নিয়ে চারদিকে চক্রাকারে সুযোগের সন্ধান করে বেড়াচ্ছিল। সে আর কালবিলম্ব না করে সেই অরক্ষিত পথের দিকে নক্ষত্রবেগে ঘোড়া ছুটিয়ে দিল এবং দেখতে দেখতে পশ্চাদদিক দিয়ে মুসলিমগণের মাথার উপর এসে উপস্থিত হ’ল। শ্রেষ্ঠবীর আব্দুল্লাহ তাঁর সহচর কয়েকজনকে নিয়ে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আদেশ পালন করে চললেন। কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যে তাঁরা সবাই শাহাদত বরণ করলেন। এদিকে মুসলিম সৈন্যরা নির্ভাবনায় গণীমতের মাল সংগ্রহ করতে ব্যাপৃত আছেন। এমন সময় প্রথমে খালিদের ঘোড়সওয়ার সেনাদল এবং তার পর অন্যান্য ঘোড়সওয়ার ও পদাতিক সেনাদল অতর্কিত অবস্থায় তাদেরকে ভীষণভাবে আক্রমণ করল এবং সতর্ক হবার আগেই বহু মুসলিমকে কুরাইশদের হাতে নিহত হতে হল। কুরাইশদের জাতীয় পতাকা এতক্ষণ মাটিতে গড়াগড়ি যাচ্ছিল। খালিদের এ আক্রমণ এবং মুসলিমগণের উপস্থিত সংকটাপন্ন অবস্থা দেখে আমরাহ বিনতু আলকামা নামে জনৈকা কুরাইশ বীরাঙ্গনা আবার তা তুলে ধরল। সম্পূর্ণ পরাজয়ের পর ভূলুণ্ঠিত জাতীয় পতাকাকে পুনরায় যুদ্ধ ক্ষেত্রে উড্ডীয়মান হতে দেখে ছুটে বিক্ষিপ্ত ও পলায়নপর কুরাইশ সৈন্যগণ আবার সেই পতাকার দিকে ছুটে আসল এবং তারা আবার দলবদ্ধভাবে মুসলিমগণকে আক্রমণ করল। এবার মুসলিমরা অগ্রপশ্চাৎ দু’ দিক হতে আক্রান্ত হয়ে যাঁতার মধ্যস্থলে পড়লে যে অবস্থা হয় তাই হল।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বিপদসংকুল ফায়সালা এবং বীরত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
-
এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মাত্র নয়জন[1] সাহাবীসহ পিছনে রয়ে গিয়েছিলেন[2] এবং মুসলিমগণের শৌর্যবীর্য ও মুশরিকদের শোচনীয় অবস্থার দৃশ্য অবলোকন করছিলেন। এমন সময় হঠাৎ খালিদ ইবনু ওয়ালীদের ঘোড়সওয়ার সৈন্যগণ তাঁর দৃষ্টি গোচর হয়। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সামনে দু’টি পথ ছিল। আর তা হচ্ছে, হয় তিনি তাঁর নয় জন সহচরসহ দ্রুত গতিতে পলায়ন করে কোন এক সুরক্ষিত স্থানে চলে যেতেন এবং স্বীয় সেনা বাহিনীকে যারা ভিড়ের মধ্যে পড়ে যেতে চাচ্ছিলেন, তাদের ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিতেন, নয়তো নিজের জীবনকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে স্বীয় সাহাবীদেরকে ডাক দিতেন এবং এক নির্ভরযোগ্য সংখ্যক সাহাবাকে নিজের কাছে একত্রিত করে তাদের মাধ্যমে অবরোধ ভেঙ্গে দিয়ে নিজের সেনাবাহিনীর জন্যে উহুদ পাহাড়ের উপরিভাগের দিকে চলে যাওয়ার পথ করে দিতেন। এ চরম সংকটময় মুহূর্তে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর তুলনাবিহীন বীরত্ব প্রকাশিত হয়েছে। কেননা তিনি নিজের জীবন রক্ষা করে পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে নিজের জীবনকে বিপদের মুখে নিক্ষেপ করে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর জীবন রক্ষা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
তাই তো তিনি খালিদ ইবনু ওয়ালীদের ঘোড়সওয়ার সৈন্যদেরকে দেখা মাত্রই উচ্চেঃস্বরে স্বীয় সাহাবীদেরকে ডাক দেন, ‘ওরে আল্লাহর বান্দারা এদিকে……….।’ অথচ তিনি জানতেন যে, তাঁর ঐ শব্দ মুসলিমগণের পূর্বে মুশরিকদেরই কানে পৌঁছবে। আর হলোও তাই। যেমন দেখা গেল যে, তাঁর ঐ আওয়াজ শুনে মুশরিকরা অবগত হল যে, এ মুহূর্তে তাঁর অবস্থান কোথায় রয়েছে। যার ফলে তাদের একটি বাহিনী মুসলিমগণের পূর্বেই তাঁর নিকটে এসে পড়ে এবং বাকী ঘোড়সওয়াররা দ্রুততার সাথে মুসলিমগণকে ঘিরে ফেলতে শুরু করে। এখন দুটি ভিড়ের বিস্তারিত বিবরণ পৃথক পৃথকভাবে উল্লেখ করছি।