উহুদের যুদ্ধ পার্ট ২৫
ঘাঁটিতে স্থিতিশীলতার পর
যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঘাঁটির মধ্যে স্বীয় অবস্থানস্থলে কিছুটা স্থিতিশীল হন তখন আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) ‘মিহরাস’ হতে স্বীয় ঢালে করে পানি ভরে আনেন। সাধারণত বলা হয়ে থাকে যে, ‘মিহরাস’ পাথরের তৈরি ঐ গর্তকে বলা হয় যার মধ্যে বেশী পানি আসতে পারে। আবার এ কথাও বলা হয়ে থাকে যে, ‘মিহরাস’ উহুদের একটি ঝর্ণার নাম। যা হোক, আলী (রাঃ) ঐ পানি নাবী (সাঃ)-এর খিদমতে পান করার জন্য পেশ করেন। নাবী (সাঃ) কিছুটা অপছন্দনীয় গন্ধ অনুভব করেন। সুতরাং তিনি ঐ পানি পান করলেন না বটে, তবে তা দ্বারা চেহারার রক্ত ধুয়ে ফেললেন এবং মাথায়ও দিলেন। ঐ সময় তিনি বলছিলেন,
‘ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহর কঠিন গযব হোক, যে তার নাবী (সাঃ)-এর চেহারাকে রক্তাক্ত করেছে।’
সাহল (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যখম কে ধুয়েছেন, পানি কে ঢেলে দিয়েছেন এবং প্রতিষেধকরূপে কোন্ জিনিস প্রয়োগ করা হয়েছে তা আমার বেশ জানা আছে। তাঁর কলিজার টুকরা ফাতিমাহ (রাঃ) তাঁর যখম ধুচ্ছিলেন, আলী (রাঃ) ঢাল হতে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন এবং ফাতিমাহ (রাঃ) যখন দেখেন যে, পানির কারণে রক্ত বন্ধ হচ্ছে না, তখন তিনি চাটাই এর অংশ নিয়ে জ্বালিয়ে দেন এবং ওর ভস্ম নিয়ে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দেন। এর ফলে রক্ত বন্ধ হয়ে যায়।’
এদিকে মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) মিষ্ট ও সুস্বাদু পানি নিয়ে আসেন। ঐ পানি নাবী (সাঃ) পান করেন এবং কল্যাণের দু’আ করেন।[3] যখমের ব্যথার কারণে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যুহরের সালাত বসে বসে আদায় করেন এবং সাহাবায়ে কিরামও (রাঃ) তাঁর পিছনে বসে বসে সালাত আদায় করেন।
আবূ সুফইয়ানের আনন্দ ও উমার (রাঃ)-এর সাথে কথোপকথন
মুশরিকরা প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করে ফেললে আবূ সুফইয়ান উহুদ পাহাড়ের উপর দৃশ্যমান হল এবং উচ্চৈঃস্বরে বলল, ‘তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ (সাঃ) আছে কি?’ মুসলিমরা কোন উত্তর দিলেন না। সে আবার বলল, ‘তোমাদের মধ্যে আবূ কুহাফার পুত্র আবূ বাকর (রাঃ) আছে কি?’ তাঁরা এবারও কোন জবাব দিল না। সে পুনরায় প্রশ্ন করে, ‘তোমাদের মধ্যে উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আছে কি?’ সাহাবীগণ এবারও উত্তর দিলেন না। কেননা, নাবী (সাঃ) তাদেরকে উত্তর দিতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। আবূ সুফইয়ান এ তিন জন ছাড়া আর কারো ব্যাপারে প্রশ্ন করে নি। কেননা, তার ও তার কওমের এটা খুব ভালই জানা ছিল যে, ইসলাম এ তিন জনের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। মোট কথা, যখন কোন উত্তর পাওয়া গেল না তখন সে বলল, ‘চলো যাই, এ তিন জন হতে অবকাশ লাভ করা গেছে।’ এ কথা শুনে উমার (রাঃ) আর ধৈর্য্য ধরতে পারলেন না। তিনি বলে উঠলেন, ‘ওরে আল্লাহর শত্রু। যাদের তুই নাম নিয়েছিস তাঁরা সবাই জীবিত রয়েছেন এবং এখনো আল্লাহ তোকে লাঞ্ছিত করার উৎস বাকী রেখেছেন।’ এরপর আবূ সুফইয়ান বলল, ‘তোমাদের নিহতদের মুসলা করা হয়েছে অর্থাৎ নাক, কান ইত্যাদি কেটে নেয়া হয়েছে। কিন্তু এরূপ করতে আমি হুকুমও করিনি এবং এটাকে খারাপও মনে করিনি।’ অতঃপর সে চিৎকার করে বলল, ‘অর্থাৎ হুবল (ঠাকুর) সুউচ্চ হোক।’
নাবী (সাঃ) তখন সাহাবীদেরকে বললেন, ‘তোমরা জবাব দিচ্ছ না কেন? তারা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমরা কী জবাব দিব?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা বল, অর্থাৎ ‘আল্লাহ সুউচ্চ ও অতি সম্মানিত।’ আবার আবূ সুফইয়ান চিৎকার করে বলল, অর্থাৎ আমাদের জন্যে উযযা (প্রতিমা) রয়েছে, তোমাদের জন্যে উযযা নেই।’
নাবী (সাঃ) পুনরায় সাহাবীদেরকে বললেন, ‘তোমরা উত্তর দিচ্ছ না কেন?’ তারা বললেন, ‘কী উত্তর দিব?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা বল, অর্থাৎ ‘আল্লাহ আমাদের মাওলা এবং তোমাদের কোন মাওলা নেই।’
অতঃপর আবূ সুফইয়ান বললেন, ‘কতই না ভাল কাজ হল! আজকের দিনটি বদর যুদ্ধের দিনের প্রতিশোধ। আর যুদ্ধ হচ্ছে বালতির ন্যায়।’
উমার (রাঃ) এ কথার উত্তরে বলেন, ‘সমান নয়। কেননা আমাদের নিহতরা জান্নাতে আছেন, আর তোমাদের নিহতরা জাহান্নামে আছে।’
এরপর আবূ সুফইয়ান বলল, ‘উমার (রাঃ) আমার নিকটে এসো।’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে বললেন, ‘যাও, দেখা যাক কী বলে?’ উমার (রাঃ) নিকটে আসলে আবূ সুফইয়ান তাঁকে বলে, ‘আমি তোমাকে আল্লাহর মাধ্যম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, ‘আমরা মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে হত্যা করেছি কি?’ জবাবে উমার (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! না, বরং এখন তিনি তোমাদের কথা শুনছেন।’ আবূ সুফইয়ান তখন বলল, ‘তুমি আমার নিকট ইবনু কামআর হতে অধিক সত্যবাদী।’