অন্যান্য টপিকনবীদের জীবনী

উহুদের যুদ্ধ পার্ট ৮

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সেনাবাহিনীর মধ্যে বীরত্বের প্রেরণাদান

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঘোষণা করেন যে, তিনি নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কেউ যেন যুদ্ধ শুরু না করে। তিনি নীচে ও উপরে দুটি লৌহ বর্ম পরিহিত ছিলেন। তিনি সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-কে যুদ্ধের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে জোর দিয়ে বলেন যে, তারা যেন শত্রুদের সাথে মোকাবেলার সময় অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে বীরত্বের প্রেরণা দিয়ে তিনি একখানা অত্যন্ত ধারাল তরবারী হাতে নিয়ে বললেন,

‘কে এটা গ্রহণ করবে? কে এর মর্যাদা রক্ষা করবে?

বলা বাহুল্য যে, ঐ তরবারী খানা গ্রহণের জন্য চারদিক থেকে কয়েক শ’ বাহু উর্ধ্বে উত্থিত হয়েছিল যার মধ্যে আলী ইবনু আবূ ত্বালিব, জোবায়ের ইবনু ‘আউওয়াম এবং উমার ইবনু খাত্তাবও ছিলেন। উপস্থিতদের মধ্যে অনেকে ওটা গ্রহণ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করতে লাগল। কিন্তু তা গ্রহণের জন্য আবূ দুজানাহ সিমাক ইবনু খারশা (রাঃ) সবার আগে অগ্রসর হলেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এ তরবারীর হক কী?’’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন,

এর দ্বারা তুমি শত্রুদের মুখমন্ডলে এমন ভাবে মারবে যেন তা বেঁকে যায়।’

তখন তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল আমি এর হক আদায় করব।’’ তখন তলোয়ারটি তাঁর হাতে দিয়ে দেয়া হল।

আবূ দুজানাহ (রাঃ) অত্যন্ত বীর পুরুষ ছিলেন, যুদ্ধের সময় গর্ব ভরে চলাফেরা করতেন। তাঁর নিকট একটি লাল পাগড়ী ছিল যখন তিনি সেটা মাথায় বাঁধতেন তখন উপস্থিত জনতা অনুভব করতেন যে, মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত যুদ্ধ করবেন।

কাজেই তলোয়ারটি হাতে পেয়ে আবূ দুজানাহর গর্ব দেখে কে? তিনি মাথায় লাল রুমালের খুব সুন্দর পাগড়ি বেঁধে নিয়ে হেলতে দুলতে ও নর্তন কুর্দনের ইন্দ্রজাল সৃষ্টি করতে করতে গিয়ে কুরাইশ বাহিনীর উপর আপতিত হলেন। এ দৃশ্য দেখে করে নাবী কারীম (সাঃ) বললেন,

এরূপ চাল- চলন আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন না বটে, কিন্তু এ রকম পরিস্থিতিতে নয়।’’

মক্কা বাহিনীর বিন্যাস

মুশরিকগণও কাতারবন্দী নীতির অনুসরণে নিজেদের সেনা বাহিনীর বিন্যাস সাধন করেছিল। তাদের সেনাপতি ছিল আবূ সুফইয়ান। সে নিজের কেন্দ্র তৈরি করেছিল সেনা বাহিনীর মধ্যস্থলে। দক্ষিণ বাহুর উপর ছিল খালিদ ইবনু ওয়ালীদ, যিনি তখন পর্যন্ত মুশরিক ছিলেন। বাম বাহুর উপর ছিল ইকরামা ইবনু আবূ জাহল। পদাতিক সৈন্যের সেনাপতি ছিল সাফওয়ান ইবনু উমাইয়া আর তীরনন্দাজদের নেতা ছিল আব্দুল্লাহ ইবনু রাবী’আহ।

তাদের পতাকা ছিল বনু আবদিদ্দারের ছোট একটি দলের হাতে। এ পদ তারা ঐ সময় হতে লাভ করেছিল যখন বনু আবদি মানাফ কুসাই হতে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত পদসমূহকে পরস্পর বন্টন করে নিয়েছিল। তারপর পূর্বপুরুষ হতে যে প্রথা চলে আসছিল ওটাকে সামনে রেখে কেউ এ পদের ব্যাপারে তাদের সাথে বিতর্কেও লিপ্ত হতে পারত না। কিন্তু সেনাপতি আবূ সুফইয়ান তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, বদরের যুদ্ধে তাদের পতাকা বাহক নযর ইবনু হারিস বন্দী হলে কুরাইশকে বড়ই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল। এটা স্মরণ করিয়ে দেয়ার সাথে সাথেই তাদের ক্রোধ বৃদ্ধি করার জন্য বলেন, ‘হে বনী আবদিদ্দার গোত্র! বদরের যুদ্ধের দিন আমাদের পতাকা তোমরা নিয়ে রেখেছিলে। ঐ দিন আমাদেরকে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল তা তোমরা অবগত আছ। প্রকৃত পক্ষে সেনাবাহিনীর উপর পতাকার দিক থেকেই বিপদ নেমে আসে। যখন পতাকা পতিত হয় তখন তাদের পা আলগা হয়ে যায়। সুতরাং এবার তোমরা আমাদের পতাকা সঠিকভাবে ধারণ করে থাকবে অথবা আমাদের পতাকা আমাদেরকেই দিয়ে দিবে। আমরা নিজেরাই এর ব্যবস্থা করব।’’ এ কথায় আবূ সুফইয়ানের যে উদ্দেশ্য ছিল তাতে সে সফলকাম হয়। কেননা, এ কথা শুনে বনু আবদিদ্দার ভীষণ চটে যায় এবং ক্রোধে ফেটে পড়ার উপক্রম হয়। তারা বলে ওঠে, ‘আমরা আমাদের পতাকা তোমাদেরকে দেব? কারও মোকাবেলা হলে আমরা কী করি তা দেখতে পাবে।’’ আর বাস্তবিকই যখন যুদ্ধ শুরু হলো তখন তারা অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত এক এক করে সবাই মৃত্যুর কবলে পতিত হল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker