অন্যান্য টপিকইসলামিক খবরইসলামিক ঘটনাইসলামিক ছবি

কৃতঙ্গতা –

পিতৃ-মাতৃহারা আলেমা খাতুন মামা আনোয়ারের আশ্রয়ে থেকে বড় হয়েছে। মামা তাকে নিজ কন্যা স্নেহে প্রতিপালন করে আসছে। উপযুক্ত শিক্ষিতাও করেছে। আলেমা অতিশয় সুন্দরী যুবতী। যে কোন যুবক এক নযর দেখলে তাকে স্ত্রী হিসাবে পেতে আগ্রহী হবে। মামার আর্থিক অবস্থা সচ্ছল নয়। সংসারে স্ত্রী, একমাত্র পুত্র সন্তান ও ভাগিনী আলেমা। পুত্রটি আলেমা হ’তে বয়সে অনেক ছোট। তারা দু’জন আপন ভাই-বোনের মত। সে তাকে আন্তরিক স্নেহে দেখা-শুনা ও আদর-সোহাগ করে আসছে। সমস্যা হচ্ছে ঐ ভাইটির কঠিন অসুখ।

ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছে অপারেশন করাতে। অপারেশনের জন্য দু’লাখ টাকা দরকার। আনোয়ারের পক্ষে এত টাকা যোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই বাড়ীতে দারুণ অশান্তি বিরাজ করছে। মামী আলেমাকে ভালো চোখে দেখে না। তাকে দিয়ে সংসারের যাবতীয় কাজ করিয়ে নেয়। এজন্য স্বামী-স্ত্রীতে মাঝে-মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। স্বামী স্ত্রীকে বলে, ‘ওর উপর থেকে কাজের চাপটা কমাও’। স্ত্রী এতে রেগে গিয়ে বলে, ‘তুমি আমার কাজ করা দেখতে পাও না? আমি কি শুধু বসে বসে খাই’? স্বামী তাকে শান্ত সুরে বলে, সংসার তো তোমার, তুমি কাজ করবে না তো কে করবে?

আলেমা সুন্দরী ও বিদুষী যুবতী। গ্রামের একজন সৎ শিক্ষিত বেকার যুবক ফিরোয তাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক। সে আনোয়ারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। সে একটা চাকুরী যোগাড় করতে পারলেই তাকে বিয়ে করে নিয়ে চাকুরী স্থলে চলে যাবে। আনোয়ার ও ফিরোযের মধ্যে এরূপ কথাবার্তা স্থির হয়ে আছে। ইতিমধ্যে সে ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠিত ঔষধ কোম্পানীতে ভাল বেতনের চাকুরী পেয়েছে। সেকারণ সে আলেমাকে বিয়ে করতে বাড়ী এসেছে।

এদিকে গ্রামের এক ধনী পরিবারের একমাত্র ছেলের সাথে আলেমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে একজন ঘটক আনোয়ারের কাছে আসে। ঘটক তার ছেলের অসুখের খবর জানে। সে এও জানে তার ছেলের চিকিৎসার জন্য দু’লাখ টাকার প্রয়োজন। আর এত

টাকা সংগ্রহ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। ঘটক বরের পক্ষ থেকে তার ছেলের চিকিৎসার জন্য দু’লাখ টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। সাধারণতঃ ধনী পরিবারের সন্তানের চরিত্র ভাল থাকে না। ছেলেটি নেশাগ্রস্ত এবং সে দু’বার বিয়েও করেছে। কিন্তু একটি স্ত্রীও ঘরে নেই। কারণ সে স্ত্রীদের সাথে অমানবিক আচরণ করে। এজন্য তার ঘরে স্ত্রী টিকে না। তাই আলেমার মামা এ বিয়েতে অসম্মতি জানায় এবং ঘটককে এ বাড়ীতে পুনরায় আসতে নিষেধ করে দেয়।

আলেমা মামা ও ঘটকের সব কথাবার্তা শুনে মনে মনে স্থির সিদ্ধান্ত নেয় যে, টাকার জন্যই সে গ্রামের মন্দ চরিত্রের ছেলেকে বিয়ে করবে। কারণ মামার একমাত্র ছেলের যাতে সুচিকিৎসা হয়। সে বেশ ভালভাবেই বুঝতে পেরেছে যে, তার মামা কস্মিনকালেও এ বিয়েতে সম্মতি দিবে না। তাই সে মামাকে বলে চাচার কাছে চলে যায়। তারপর চাচাকে বুঝিয়ে বলে ধনাঢ্য ঐ ছেলের কথা। অতঃপর চাচার মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হয়।

এরপর একদিন খুব ভোরে এসে সবার অলক্ষ্যে একটি চিঠি ও টাকা রেখে চলে যায় আলেমা। মামা ঘরে ঢুকে দেখে বিছানায় একটি চিঠি আছে। চিঠিতে লেখা আছে, আমি দু’লাখ টাকার বিনিময়ে গ্রামের মন্দ চরিত্রের ছেলেকে বিয়ে করেছি। ঘরের স্যুটকেসে টাকাগুলি আছে। আমি বিশ্বাস করি, আমি স্বামীর চরিত্র পরিবর্তন করতে সক্ষম হব। কারণ চরিত্র পরিবর্তনশীল। জগতে অনেক মন্দ চরিত্রের লোক পরবর্তী জীবনে অতি সৎ লোকে পরিণত হয়েছে। আমি অতি অনুরোধের সাথে বলছি, অতি সত্বর যেন আমার ভাইয়ের সুচিকিৎসা করা হয়।

এ ঘটনায় মামী নিজের কাছে নিজে অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে যায়। যে আলেমার প্রতি সে এতদিন ধরে অহেতুক যুলুম-অত্যাচার করেছে। এমনকি তাকে পেট ভরে খেতেও দেয়নি, সে আলেমাই আজ তার সন্তানের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে। ক’জন এমন করে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারে? সে তার এরূপ হীন আচরণের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker