আখিরাত

জান্নাত ও জাহান্নাম পূর্ব হতেই সৃষ্ট

আহলে সুন্নাহ অল-জামাআতের আক্বীদা এই যে, মহান সৃষ্টিকর্তা জান্নাত-জাহান্নাম আগেই সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তার বাসিন্দা সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ, জান্নাত-জাহান্নাম বর্তমানে প্রস্তুত রয়েছে। মহান আল্লাহ জান্নাত সম্বন্ধে বলেছেন,

وَسَارِعُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ

অর্থাৎ, তোমরা প্রতিযোগিতা (ত্বরা) কর, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে ক্ষমা এবং বেহেস্তের জন্য, যার প্রস্থ আকাশ ও পৃথিবীর সমান, যা ধর্মভীরুদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। (আলে ইমরানঃ ১৩৩)

سَابِقُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ

অর্থাৎ, তোমরা আগ্রণী হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর প্রশস্ততার মত, যা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রসূলগণে বিশ্বাসীদের জন্য। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তাকে তা দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (হাদীদঃ ২১)

আর জাহান্নাম সম্বন্ধে বলেছেন,

فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا وَلَن تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ ۖ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ

অর্থাৎ, যদি তোমরা (সূরা আনয়ন) না কর, এবং কখনই তা করতে পারবে না, তাহলে সেই আগুনকে ভয় কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, অবিশ্বাসীদের জন্য যা প্রস্তুত রয়েছে। (বাক্বারাহঃ ২৪)

وَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ

অর্থাৎ, তোমরা সেই আগুনকে ভয় কর, যা অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। (আলে ইমরানঃ ১৩১)

إِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا (21) لِّلطَّاغِينَ مَآبًا (22)

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই জাহান্নাম ওঁৎ পেতে রয়েছে—সীমালংঘনকারীদের প্রত্যাবর্তনস্থল রূপে। (নাবাঃ ২১–২২)

মহানবী (সাঃ) মিরাজের রাতে জান্নাত দর্শন করেছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَىٰ (13) عِندَ سِدْرَةِ الْمُنتَهَىٰ (14) عِندَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَىٰ (15) إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَىٰ (16) مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَىٰ (17) لَقَدْ رَأَىٰ مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَىٰ (18)

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল। সিদরাতুল মুনতাহার নিকট। যার নিকট অবস্থিত (জান্নাতুল মাওয়া) বাসােদ্যান। যখন (বদরী) বৃক্ষটিকে, যা আচ্ছাদিত করার ছিল তা আচ্ছাদিত করল, তার দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি, দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুতও হয়নি। নিঃসন্দেহে সে তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলী দেখেছিল। (নাজমঃ ১৩-১৮)।

বরং মহানবী (সাঃ) সে রাত্রে জান্নাতে প্রবেশ করেছেন। (বুখারী-মুসলিম)

মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের কেউ যখন মারা যায়, তখন সকালসন্ধ্যায় তার অবস্থানক্ষেত্র তাকে প্রদর্শন করা হয়। জান্নাতী হলে জান্নাতের এবং জাহান্নামী হলে জাহান্নামের। তাকে বলা হয়, এই হল তোমার থাকার জায়গা; যে পর্যন্ত না তোমাকে কিয়ামতে আল্লাহ পুনরুত্থিত করবেন।” (বুখারী ১৩৭৯, মুসলিম ২৮৬৬নং)

কবরের হিসাব ও প্রশ্ন সংক্রান্ত দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ‘…তখন আসমানের দিক হতে এক শব্দকারী শব্দ করেন, “আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তার জন্য বেহেস্তের একটি বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে বেহেস্তের একটি লেবাস পরিয়ে দাও। এ ছাড়া তার জন্য বেহেস্তের দিকে একটি দরজা খুলে দাও।” তখন তার প্রতি বেহেস্তের সুখ-শান্তি ও বেহেস্তের খোশবু আসতে থাকে এবং তার জন্য তার কবর দৃষ্টিসীমা বরাবর প্রশস্ত করে দেওয়া হয়। (আহমাদ ৪/২৮৭-২৮৮, আবু দাউদ ৪৭৫৩নং)।

একদা সূর্যগ্রহণের নামায পড়তে পড়তে মহানবী জান্নাত দর্শন করে অগ্রসর হয়েছিলেন এবং জাহান্নাম দর্শন করে পিছু হটেছিলেন। (মুসলিম ৯০১নং)

তিনি বলেছেন, “আমি জান্নাতের দুয়ারে দাঁড়ালাম। অতঃপর দেখলাম, যারা জান্নাতে প্রবেশ করেছে, তাদের অধিকাংশ গরীব-মিসকীন মানুষ। আর ধনবানদেরকে (তখনও হিসাবের জন্য আটকে রাখা হয়েছে। পক্ষান্তরে (অন্যান্য) জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর আমি জাহান্নামের দুয়ারে দাঁড়িয়ে দেখলাম যে, যারা তাতে প্রবেশ করেছে, তাদের বেশীরভাগই নারীর দল।” (বুখারী ও মুসলিম)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে সাহাবীদের কোন কথা পৌছল। অতঃপর তিনি ভাষণ দিয়ে বললেন, “আমার নিকট জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হল। ফলে আমি আজকের মত ভাল ও মন্দ (একত্রে) কোন দিনই দেখিনি। যদি। তোমরা তা জানতে, যা আমি জানি, তাহলে কম হাসতে আর বেশি কঁদতে।” সুতরাং সাহাবীদের জন্য সেদিনকার মত কঠিনতম দিন আর ছিল না। তাঁরা তাঁদের মাথা আবৃত করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। (বুখারী, মুসলিম)।

তিনি বলেছেন, “মুমিনদের রূহ জান্নাতের গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। পরিশেষে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দেহে ফিরিয়ে দেবেন।” (মালেক, নাসাঈ, বাইহাক্বী, সিঃ সহীহাহ ৯৯৫নং)

উক্ত হাদীস থেকে এ কথাও প্রমাণ হয় যে, কিয়ামত আসার পূর্বেও মুমিনদের রূহ জান্নাতে অবস্থান করে।

মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহ যখন জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টি করলেন, তখন জিব্রাঈলকে জান্নাতের দিকে পাঠিয়ে বললেন, ‘যাও, জান্নাত এবং তার অধিবাসীদের জন্য প্রস্তুতকৃত সামগ্রী দর্শন কর। সুতরাং তিনি গেলেন এবং দর্শন করে ফিরে এসে বললেন, ‘আপনার সম্মানের কসম! যে কেউ এর কথা শুনবে, সে এতে প্রবেশ করতে চাইবে। অতঃপর আল্লাহ জান্নাতকে কষ্টসাধ্য কর্মসমুহ দিয়ে ঘিরে দিতে আদেশ করলেন। তারপর আবার তাকে বললেন, যাও, জান্নাত এবং তার অধিবাসীদের জন্য প্রস্তুতকৃত সামগ্রী দর্শন কর। সুতরাং তিনি গেলেন এবং দর্শন করে ফিরে এসে বললেন, আপনার সম্মানের কসম! আমার আশঙ্কা হয় যে, কেউ তাতে প্রবেশ করতে পারবে না।

অতঃপর আল্লাহ তাকে জাহান্নামের দিকে পাঠিয়ে বললেন, ‘যাও, জাহান্নাম এবং তার অধিবাসীদের জন্য প্রস্তুতকৃত সামগ্রী দর্শন কর। সুতরাং তিনি গেলেন এবং দেখলেন, তার আগুনের এক অংশ অপর অংশের উপর চেপে রয়েছে। অতঃপর তিনি ফিরে এসে বললেন, ‘আপনার সম্মানের কসম! যে কেউ এর কথা শুনবে, সে এতে প্রবেশ করতে চাইবে না। তারপর জাহান্নামকে মনোলােভা জিনিসসমূহ দিয়ে ঘিরে দিতে আদেশ করলেন এবং পুনরায় তাকে বললেন, ‘যাও, জাহান্নাম এবং তার অধিবাসীদের জন্য প্রস্তুতকৃত সামগ্রী দর্শন কর। সুতরাং তিনি গেলেন এবং দর্শন করে ফিরে এসে বললেন, আপনার সম্মানের কসম! আমার আশঙ্কা হয় যে, কেউ পরিত্রাণ পাবে না, সবাই তাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, সঃ তারগীব ৩৬৬৯নং)

হাদীসগ্রন্থগুলিতে এই শ্রেণীর আরো হাদীস রয়েছে, যাতে প্রমাণ হয় যে, জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টি করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সুর ফুঁকার পরেও জান্নাত-জাহান্নাম অবশিষ্ট থাকবে, যেমন কিয়ামতে সূর্য থাকবে। অতএব এই সন্দেহে তা এখন সৃষ্ট নয় বলা যাবে না। বরং তা সৃষ্ট প্রস্তুত আছে। অবশ্য তার মধ্যে এমনও কিছু সাজ-সামগ্রী আছে, যা মহান আল্লাহ পরে সৃষ্টি করবেন।

]]>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker