অন্যান্য টপিকইসলামিক খবরইসলামিক ঘটনা

দুই কিশোর – আবু জাহেলের মৃত্যু ও বদর যুদ্ধের গল্প।

বদরের ময়দান।

একদিকে মুসলমান। আরেক দিকে কাফের। মুসলমানদের দলে আছেন স্বয়ং রাসূলে করীম (সাঃ)। আরো আছেন সাহাবীগণ। কাফেরদের দলে রয়েছে মক্কার বড় বড় কাফের সর্দার। বহুদিন পর্যন্ত যেসব কাফের মক্কায় মুসলমানদের কষ্ট দিয়েছে, নির্যাতন করেছে, রাসূল (সাঃ)-কে হত্যার চেষ্টা করেছে, তাঁদের অনেকেই এই যুদ্ধে এসেছে। বদর যুদ্ধ হলো কাফেরদের সাথে মুসলমানদের প্রথম প্রকাশ্য #জিহাদ।

তুমুল যুদ্ধ চলছে। চারিদিকে শত্রুকে খুঁজে চলেছে সবাই। কেউ কারো দিকে নজর দিতে পারছেনা। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) এক জায়গায় দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করেছিলেন, শত্রুকে কিভাবে ঘায়েল করা যায়। হঠাৎ দেখলেন, তার দু’পাশে এসে দাঁড়ালো দুটি বালক। দু’জনই মুসলিম।

আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) বালক দু’জনের দিকে তাকালেন। মনে মনে তিনি হতাশ। এরা তো নিতান্তই বালক! এরা যুদ্ধ করবে কিভাবে! তিনি ভাবছিলেন, যদি তার আশে-পাশে আরো শক্তসমর্থ মুসলমান থাকতেন, তাহলে কাফেরদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর সময় একজন আরেকজনকে সহযোগিতা করতে পারতেন; কিন্তু সেই কাজ কি এই বালক দু’জনকে দিয়ে সম্ভব?

বালক দু’জন সম্পর্কে তিনি যখন এ ধরনের ভাবনা ভাবছিলেন, তখনই এক বালক এসে তার হাত জড়িয়ে ধরলো। তারপর বল—চাচাজান! আপনি আবু জেহেল কে চিনেন?

আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ জবাবে বললেন—হ্যাঁ, চিনি। কিন্তু আবু জেহেলকে তোমার কী প্রয়োজন?’

সেই বালক বললো—“আমরা শুনেছি, আবু জেহেল আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ)-কে গালা গালি করে। নবীজীর নামে আজে-বাজে কথাবার্তা বলে বেড়ায়। আল্লাহর কসম! যদি আবু জেহেলকে দেখতে পাই, তবে তার জীবন খতম করার আগে আমি ক্ষ্যান্ত হবো না। যদি তাঁকে খতম করতে না পারি তবে নিজেই শহীদ যাবো।”

বালকের কথা শুনে আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) অবাক হয়ে গেলেন। অল্প বয়সী বালক! অথচ কী অসামান্য সাহস!

এসময়ের অপর বালকটিও তাঁকে জিজ্ঞাসা করল—আবু জেহেল কে, কোথায় পাওয়া যাবে, জানতে চাইলো। আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) তাঁকেও প্রশ্ন করলেন—“আবু জেহেলকে তোমার কী প্রয়োজন?”—এই বালকটিও আগের বালকের মতই জবাব দিল। আবু জেহেলকে যেখানেই পাওয়া যাবে, তাঁকে হত্যা করবোই, এই প্রত্যয় ব্যক্ত করল।

পাশে দাঁড়ানো দুই কিশোরের কথায় আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) যখন বিস্মিত হচ্ছিলেন; অবাক হয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই দেখলেন, যুদ্ধের ময়দানে ঘোড়ায় চড়ে ছূটে বেড়াচ্ছে আবু জেহেল। কিশোর দু’জনকে দেখিয়ে দিলেন তিনি। বললেন-“তোমরা আমার কাছে যার পরিচয় জানতে চাচ্ছ, ঐ যে সেই লোকটা যাচ্ছে।”

আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ)-এর মুখের কথা শেষ হতে না হতেই বালক দু’জন ছুটলো। তীরের মত ছুটতে ছুটতে গিয়ে আবু জেহেলের সামনে হাজির হলো দু’জনই।

আবু জেহেল ঘোড়ায় চড়ে ছুটছিল। বালক দু’জনের পক্ষে ঘোড়ায় চড়ে থাকা আবু জেহেলের শরীরে সরাসরি আঘাত করা ছিল অসম্ভব। একজন আক্রমণ করল আবু জেহেলের ঘোড়ায়। আরেকজন আবু জেহেলের পায়ে খোলা তলোয়ার দিয়ে আঘাত করল।

মুহূর্তের মধ্যেই কাফের সর্দার আবু জেহেল মাটিতে গড়িয়ে পড়ল। মাটিতে পড়েই ছটফট করতে লাগল আবু জেহেল। বালক দু’জন সমানতালে তাঁকে আঘাত করে চলল।

আবু জেহেলের পাশে পাশে যুদ্ধ করছিল এক ছেলে। হঠাৎ করেই বাবার এই করুণ দশা হতে দেখে সে থমকে গিয়েছিল প্রথমে। এরপর সে বালক দু’জনের একজনের উপর তরবারী চালিয়ে দিল। বালকের মাথা লক্ষ্য করে তরবারীর আঘাত করেছিল আবু জেহেলের ছেলে। কিন্তু সেই আঘাত এসে লাগল বালকের হাতে। হাতটি শরীর থেকে আলাদা হয়ে একটি চামড়ায় ঝুলে রইল।

আবু জেহেলের ছেলে ভেবেছিল আক্রমণ করে সে বালকের হাত যখন কেটে ফেলতে পেরেছে, তখন আর বালক দু’জনকে ধরাশায়ী করা কোন ব্যাপারই নয়। কিন্তু তার এই ভাবনার মৃত্যু হলো সামান্য সময়েই।

যেই বালকের হাত কেটে ঝুলে গেছে, যুদ্ধ করতে অসুবিধা হচ্ছে বলে সে পায়ের নিচে হাত রেখে একটানে নিজের হাতটা ছিঁড়ে ফেললো। তারপর ছিঁড়ে ফেলা হাত দূরে নিক্ষেপ করে আবারো যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো।

এই অবাক করা কাণ্ড দেখে আবু জেহেলের ছেলে দ্রুত সেখন থেকে সটকে পড়ল।

বালক দু’জন আবারো আবু জেহেলের শরীরের উপর চড়ে বসলো। এখনো আবু জেহেল মরেনি। দূরথেকে বালকদের অভাবনীয় আক্রমণে আবু জেহেলের এই মরণ দশা দেখে আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) এগিয়ে এলেন। এক কোপে আবু জেহেলের শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেললেন।

রাসূলের এক ভয়ানক দুশমনকে খতম করল দুই কিশোর। সাহসী কিশোর দু’জনের একজনের নাম মা’আয। এর হাত কাটা গিয়েছিলো। অপর জনের নাম মুআ’ও ওয়ায।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker