দুয়া – সাহাবাদের জীহাদের গল্প
দু’জন একসঙ্গে হলেন। দু’জনই রাসূলের সাহাবী। একসাথে বসে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করতে চান। একটি #জিহাদ আগামীকাল শুরু হবে। সেই জিহাদে তাঁরা দু’জনই যোগ দিবেন। সে বিষয়ে আলোচনা জন্যই তাঁদের একসঙ্গে বসা।
একজনের নাম আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রাঃ)। অন্যজনের নাম সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রাঃ) সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)-কে বললেন—“সা’দ! আগামীকালের যুদ্ধের জন্য চলুন আমরা দু’আ করি। আমরা প্রত্যেকেই যার যার ইচ্ছা ও আশা আল্লাহর কাছে ব্যক্ত করবো। অন্যজন আমীন বলবো। তাহলে আমাদের দু’আ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে বেশি।”
সা’দ রাজী হলেন আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশের এই প্রস্তাবে। তিনিও ভেবে দেখলেন, যুদ্ধের আগে অবশ্যই দুআ’ করে ময়দানে নামা উচিৎ। আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে হলে আল্লাহর সাহায্য ছাড়াতো কোন উপায় নেই। সেজন্য দু’জনই এক সঙ্গে ময়দানের এক কোণে চলে এলেন।
নির্ধারিত হলো, আগে দু’আ’ করবেন সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)। আর ‘আমীন’ বলবেন আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রাঃ)। এরপর দু’আ করবেন আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রাঃ)। ‘আমীন’ বলবেন সা’দ ইওবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)।
দু’জনই হাত তুললেন। মুনাজাত শুরু হলো। সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) দু’আ করে বললেন—“আল্লাহ! আগামীকাল জিহাদের ময়দানে আমাকে সবচেয়ে শক্তিশালী শত্রুর মোকাবেলা করার সুযোগ দিও। সেই শত্রু যেন আমাকে প্রচন্ড আক্রমণ করে এবং আমিও যেন সেই আক্রমণ প্রতিহত করতে পারি। এরপর আমি যেন তাঁকে তোমার রাস্তায় হত্যা করতে পারি। তোমার পথে তার জীবনটা খতম করে দিতে পারি। এবং তার গণীমতের সম্পদ যেন আমাদের হাতে চলে আসে। আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রাঃ) বললেন ‘আমীন’।”
সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)-এর এই ইচ্ছা ও প্রত্যাশা পুরণের জন্য আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রাঃ) ‘আমীন’ বলে আল্লাহর কাছে দরখাস্ত করলেন।
এবার আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রাঃ)-এর পালা। তিনি এবার দু’আ’ করবেন। তিনি হাত তুললেন এবং বললেন—“আল্লাহ! আগামীকাল জিহাদের ময়দানে আমাকে একজন সাহসী শত্রুর মোকাবেলা করার সুযোগ দিও। সে যেন আমার উপর মারাত্মক আক্রমণ করে এবং আমিও যেন তার বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে পারি। এরপর সে যেন আমাকে শহীদ করে ফ্রেলে এবং নাক আর কান কেটে ফেলে। কেয়ামতের ময়দানে আমি যখন আপনার দরবারে হাজির হবো, তখন আপনি জিজ্ঞাসা করবেন—“হে আব্দুল্লাহ! তোমার নাক ও কান কিসে কাঁটা গেল?” আমি তখন আরজ করবো—আমার নাক—কান আপনার এবং আপনার রাসূলের পথে কাঁটা গেছে। এরপর হে আল্লাহ। আপনি বলবেন—“তুমি সত্যই বলেছ। আমার রাস্তায় তোমার নাক-কান কাঁটা গেছে।”
হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) বললেন ‘আমীন’! তিনিও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রাঃ)-এর ইচ্ছা পূরণের জন্য আল্লাহর দরবারে দরখাস্ত করলেন।
সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রাঃ)-এর দুআ’ শুনেই চমকে উঠেছিলেন। আব্দুল্লাহ সরাসরি শাহাদাতের জন্য দুআ’ করছেন। এর অর্থ হলো, এই দুআ’ কবুল হলে জিহাদের ময়দান থেকে জীবিত অবস্থায় আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রাঃ) আর ফিরে যেতে পারবেন না। কিন্তু সা’দ (রাঃ)-এর কিছু করার উপায় ছিল না। আব্দুল্লাহ আগেই বলে নিয়েছেন, যার যার ইচ্ছা আমরা আল্লাহর কাছে ব্যক্ত করবো। আরেকজন ‘আমীন’ বলবো। সেজন্যই আব্দুল্লাহর দুআ’র পর সা’দ ‘আমীন’ বলতে বাধ্য হয়েছেন।
দুআ করার পর…
পরদিন যুদ্ধ হলো। সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য দুআ’ করেছিলেন। তিনি শত্রুকে খতম করে নিজে জীবিত ছিলেন। সন্ধ্যায় দিকে ময়দানে বের হলেন সা’দ। রক্তে মাখামাখি হওয়া শহীদ সাহাবীগণের চেহারা দেখতে দেখতে এক জায়গায় গিয়ে সা’দ দেখলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রাঃ)-এর রক্তাক্ত শরীর মাটিতে পড়ে আছে। তার পাশে পড়ে আছে তার কাঁটা যাওয়া নাক আর কান।
অদ্ভুত দুআ’ করেছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রাঃ)। সব মানুষই সব কিছুতে জয়ী হতে চায়। কিন্তু রাসূলের এই সাহাবী শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করার জন্য দুআ’ করেছিলেন। তিনি জয়ীও হয়েছেন। তার জয় পরকালে। তার জয় আল্লাহর