অন্যান্য টপিকনবীদের জীবনী

নবীজির হিজরত পার্ট ৪

কুরাইশদের প্রচেষ্টা:

এদিকে কুরাইশদের অবস্থা এই ছিল যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে হত্যার উন্মাদনায় উন্মত্ত অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করার পর প্রভাতে যখন তারা নিশ্চিতভাবে জানতে পারল যে, তিনি তাদের আয়ত্বের বাইরে চলে যেতে সক্ষম হয়েছেন, তখন তারা একদম দিশেহারা হয়ে পড়ল এবং ক্রোধের আতিশয্যে ফেটে পড়তে চাইল। তাদের ক্রোধের প্রথম শিকার হলেন আলী (রাঃ)। তাঁকে টেনে হিঁচড়ে ক্বাবা’হ গৃহ পর্যন্ত নিয়ে গেল এবং প্রায় এক ঘন্টা কাল যাবৎ তাঁর উপর নানাভাবে নির্যাতন চালাল যাতে তার নিকট থেকে তাঁদের দুজনের সম্পর্কে খোঁজ খবর কিছুটা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।[1] কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কোন সংবাদ গ্রহণ করা সম্ভব না হওয়ায় আবূ বাকর (রাঃ)-এর গৃহের উদ্দেশ্যে যাত্রা করল এবং সেখানে গিয়ে দরজায় করাঘাত করল। দরজার করাঘাত শুনে আসমা বিনতে আবূ বাকর (রাঃ) বের হলেন। তারা তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার পিতা কোথায় আছেন?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহই ভাল জানেন, আমি জানি না আববা কোথায় আছেন?’ এতে কমবখত খবীস আবূ জাহল তাঁর গন্ডদেশে এমন জোরে চপেটাঘাত করল যে, সে ব্যথার চোটে চিৎকার করে উঠল এবং তার কানের বালী খুলে পড়ে গেল।

এরপর কুরাইশগণ একটি তড়িঘড়ি সভা করে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল যে, তাঁদের ধরার জন্য অনতিবিলম্বে সম্ভাব্য সর্বপ্রকার ব্যবস্থা অবলম্বন করা হোক। ফলে মক্কা থেকে বেরিয়ে যে দিকে যত পথ গেছে সকল পথেই অত্যন্ত কড়া সশস্ত্র পাহারা বসিয়ে দেয়া হল। অধিকন্তু, সর্বত্র এ ঘোষণাও প্রচার করে দেয়া হল যে, যদি কেউ মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং আবূ বাকর (সাঃ)-কে অথবা দুজনের যে কোন একজনকে জীবন্ত কিংবা মৃত অবস্থায় হাজির করতে পারবে তাকে একশত উষ্ট্রের সমন্বয়ে একটি অত্যন্ত মূল্যবান পুরষ্কার প্রদান করা হবে।

এই প্রচারনার ফলে বিভিন্ন বাহনারোহী, পদাতিক ও পদচিহ্নবিশারদগণ অত্যন্ত জোরে শোরে অনুসন্ধান কাজ শুরু করে দিল। প্রান্তর, পর্বতমালা, শস্যভূমি, বিরান অঞ্চল সর্বত্রই তারা অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে যেতে থাকল, কিন্তু ফল হল না কিছুই।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও আবূ বাকর (রাঃ) যে পর্বত গুহায় আত্মগোপন করে ছিলেন অনুসন্ধানকারীগণ সে গুহার প্রবেশ পথের পার্শ্বদেশে পৌঁছে গেল, কিন্তু আল্লাহ আপন কাজে জয়ী হলেন। সহীহুল বুখারী শরীফে আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে যে, ‘আবূ বাকর (রাঃ) বলেছেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সঙ্গে গুহায় থাকা অবস্থায় মাথা তুলে মানুষের পা দেখতে পেলাম।’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর নাবী (সাঃ) তাদের মধ্যে কেউ যদি শুধু নিজ দৃষ্টি নীচের দিকে নামায় তাহলেই আমাদেরকে দেখে ফেলবে।’ 

তিনি বললেন, ‏ ‘আবূ বাকর (রাঃ) চুপচাপ থাক। আমরা দুজন, আর তৃতীয় জন আছেন আল্লাহ তা‘আলা।’ অন্য একটি বর্ণনায় ভাষা এরূপ আছে,   ‘হে আবূ বাকর (রাঃ) এরূপদুজন লোক সম্পর্কে তোমার কী ধারণা যাদের তৃতীয়জন হলেন আল্লাহ।

প্রকৃত কথা হচ্ছে এটা ছিল একটি মো’জেযা (অলৌকিক ঘটনা) যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবী (সাঃ)-কে প্রদান করেছিলেন। কাজেই অনুসন্ধানকারীগণ সে সময় ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হল যেখানে তিনি (সাঃ) ও তাদের মধ্যে ব্যবধান ছিল কয়েক ফুটেরও কম।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button