অন্যান্য টপিকআখিরাতইসলামিক ছবিকালেমা

ফেরাউনের পরিচয়

ফেরাঊনের পরিচয়

‘ফেরাঊন’ কোন ব্যক্তির নাম নয়। বরং এটি হল তৎকালীন মিসরের সম্রাটদের উপাধি। ক্বিবতী বংশীয় এই সম্রাটগণ কয়েক শতাব্দী ব্যাপী মিসর শাসন করেন। এই সময় মিসর সভ্যতা ও সমৃদ্ধির শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল। লাশ মমিকরণ, পিরামিড (PYRAMID), স্ফিংক্স (SPHINX) প্রভৃতি তাদের সময়কার বৈজ্ঞানিক উন্নতির প্রমাণ বহন করে। হযরত মূসা (আঃ)-এর সময়ে পরপর দু’জন ফেরাঊন ছিলেন। সর্বসম্মত ইস্রাঈলী বর্ণনাও হ’ল এটাই এবং মূসা (আঃ) দু’জনেরই সাক্ষাৎ লাভ করেন। লুইস গোল্ডিং (LOUIS GOLDING)-এর তথ্যানুসন্ধানমূলক ভ্রমণবৃত্তান্ত IN THE STEPS OF MOSSES, THE LAW GIVER অনুযায়ী উক্ত ‘উৎপীড়ক ফেরাঊন’-এর (PHARAOH, THE PERSECUTOR) নাম ছিল ‘রেমেসিস-২’ (RAMSES-11) এবং ডুবে মরা ফেরাঊন ছিল তার পুত্র মানেপতাহ (منفطه) বা মারনেপতাহ (MERNEPTAH)। লোহিত সাগর সংলগ্ন তিক্ত হরদে তিনি সসৈন্যে ডুবে মরেন। যার ‘মমি’ ১৯০৭ সালে আবিষ্কৃত হয়। সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিম তীরে ‘জাবালে ফেরাঊন’ নামে একটি ছোট পাহাড় আছে। এখানেই ফেরাঊনের লাশ প্রথম পাওয়া যায় বলে জনশ্রুতি আছে। গোল্ডিংয়ের ভ্রমণ পুস্তক এবং এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকার নিবন্ধে বলা হয়েছে যে, ‘থেব্স’ (THEBES) নামক স্থানের সমাধি মন্দিরে ১৮৯৬ সালে একটি স্তম্ভ আবিষ্কৃত হয়, যাতে মারনেপতাহ-এর আমলের কীর্তি সমূহ লিপিবদ্ধ ছিল। অতঃপর ১৯০৬ সালে বৃটিশ নৃতত্ত্ববিদ স্যার ক্রাঁফো ইলিয়ট স্মিথ (SIR CRAFTON ELLIOT SMITH) মমিগুলো খুলে মমিকরণের কলাকৌশল অনুসন্ধান শুরু করেন। এভাবে তিনি ৪৪টি মমি পরীক্ষা করেন এবং অবশেষে ১৯০৭ সালে তিনি ফেরাঊন মারনেপতাহ-এর লাশ শনাক্ত করেন। ঐসময় তার লাশের উপরে লবণের একটি স্তর জমে ছিল। যা দেখে সবাই স্তম্ভিত হন। এ কারণে যে, অন্য কোন মমি দেহে অনুরূপ পাওয়া যায়নি।[1] উক্ত লবণের স্তর যে সাগরের লবণাক্ত পানি তা বলাই বাহুল্য। এভাবে সূরা ইউনুস ৯২ আয়াতের বক্তব্য দুনিয়াবাসীর নিকটে সত্য প্রমাণিত হয়ে যায়। যেখানে আল্লাহ বলেছিলেন যে, ‘আজকে আমি তোমার দেহকে (বিনষ্ট হওয়া থেকে) বাঁচিয়ে দিলাম। যাতে তুমি পরবর্তীদের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পার’… (ইউনুস ১০/৯২)। বস্ত্ততঃ ফেরাঊনের লাশ আজও মিসরের পিরামিডে রক্ষিত আছে। যা দেখে লোকেরা উপদেশ হাছিল করতে পারে।

মূসা ও ফেরাঊন সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
نَتْلُوا عَلَيْكَ مِن نَّبَإِ مُوسَى وَفِرْعَوْنَ بِالْحَقِّ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ- إِنَّ فِرْعَوْنَ عَلاَ فِي الْأَرْضِ وَجَعَلَ أَهْلَهَا شِيَعاً يَسْتَضْعِفُ طَائِفَةً مِّنْهُمْ يُذَبِّحُ أَبْنَاءَهُمْ وَيَسْتَحْيِي نِسَاءَهُمْ إِنَّهُ كَانَ مِنَ الْمُفْسِدِيْنَ- (القصص ৩-৪)-
‘আমি আপনার নিকটে মূসা ও ফেরাঊনের বৃত্তান্ত সমূহ থেকে সত্য সহকারে বর্ণনা করব বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য’। ‘নিশ্চয়ই ফেরাঊন তার দেশে উদ্ধত হয়েছিল এবং তার জনগণকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছিল। তাদের মধ্যকার একটি দলকে সে দুর্বল করে দিয়েছিল। সে তাদের পুত্র সন্তানদের হত্যা করত ও কন্যা সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখত। বস্ত্ততঃ সে ছিল অনর্থ সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত’ (ক্বাছাছ ২৮/৩-৪)।
পবিত্র কুরআনে ফেরাঊনের আলোচনা যত এসেছে, পূর্ব যুগের অন্য কোন নরপতি সম্পর্কে এত বেশী আলোচনা আসেনি। এর মাধ্যমে ফেরাঊনী যুলুমের বিভিন্ন দিক স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যাতে ইঙ্গিত রয়েছে এ বিষয়ে যে, যুগে যুগে ফেরাঊনরা আসবে এবং ঈমানদার সৎকর্মশীলদের উপরে তাদের যুলুমের ধারা ও বৈশিষ্ট্য প্রায় একই রূপ হবে। যদিও পদ্ধতি পরিবর্তিত হবে। কোন যুগই ফেরাঊন থেকে খালি থাকবে না। তাই ফেরাঊন সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়ার জন্য আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এই নরাধম সম্পর্কে এত বেশী আলোচনা করেছেন। যাতে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা সাবধান হয় এবং যালেমদের ভয়ে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত না হয়। মুসলিম নামধারী বর্তমান মিসরীয় জাতীয়তাবাদী নেতারা ফেরাঊনকে তাদের ‘জাতীয় বীর’ বলে আখ্যায়িত করছেন এবং কায়রোর ‘ময়দানে রেমেসীস’-এর প্রধান ফটকে তার বিশাল প্রস্তর মূর্তি খাড়া করেছেন’।[2]

[1]. তানত্বাভী জওহারী (মৃ: ১৯৪০খৃ:), আল-জাওয়াহের ফী তাফসীরিল কুরআনিল কারীম (বৈরুত: দারুল ফিকর, তাবি) তাফসীর সূরা ইউনুস ৯২ দ্র: ৬/৮৪ পৃ:।
[2]. মুহাম্মাদ সালামাহ জাবর, তারীখুল আম্বিয়া (কুয়েত: মাকতাবা ছাহওয়াহ ১৪১৩/১৯৯৩) ১/১৩৭।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button