অন্যান্য টপিকনবীদের জীবনী

বদরের যুদ্ধ পর্ব ৬

মুসলিম বাহিনীর পরবর্তী অগ্রযাত্রা

এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যাফরান হতে সামনে অগ্রসর হন এবং কয়েকটি পাহাড়ী মোড় অতিক্রম করেন যেগুলোকে আসাফির বলা হয়। সেখান থেকে আরও অগ্রসর হয়ে ‘দাব্বাহ’ নামক এক জনপদে অবতরণ করেন। তারপর ‘হিনান’ নামক পাহাড়কে ডান দিকে ছেড়ে দিয়ে অগ্রসর হতে থাকেন এবং পরবর্তী পর্যায়ে বদরের নিকটবর্তী স্থানে অবতরণ করেন।

তথ্যানুসন্ধানের চেষ্টা

এখানে পৌঁছেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার ‘সওর’ গুহার সঙ্গী ও সব চাইতে ঘনিষ্ট বন্ধু আবূ বাকর (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে শত্রু বাহিনীর সন্ধান নেয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। দুর হতে তাঁরা মক্কা বাহিনীর শিবির এবং অবস্থান সম্পর্কে সমীক্ষারত ছিলেন। এমন সময় একজন বৃদ্ধ আরবকে তাঁরা পেয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঐ বৃদ্ধকে কুরাইশ বাহিনী এবং মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সাহাবীদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। দু’বাহিনী সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্দেশ্য ছিল যেন সে তাঁকে চিনতে না পারে। বৃদ্ধ বললেন, ‘আপনারা কোন কওমের সম্পর্কযুক্ত তা না জানালে আমি কিছুই বলব না।’

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন ঠিক আছে, ‘আপনি বলে দিলে আমরাও বলে দিব।’

সে বলল, ‘এটা ওটার বিনিমিয় তো?’

তিনি উত্তর দিলেন ‘হ্যাঁ’।

সে তখন বলল, ‘আমি জানতে পেরেছি যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তাঁর সঙ্গীরা অমুক দিন মদীনা থেকে বের হয়েছেন। সংবাদ দাতা, আমাকে সঠিক বলে থাকলে আজ তারা অমুক জায়গায় রয়েছেন।

সে ঠিক ঐ জায়গাটিরই নাম ঠিকানা বলে দিল যেখানে ঐ সময় মুসলিম বাহিনী অবস্থান করছিলেন।

তারপর সে বলল, আমি এটাও অবগত হয়েছিল যে, কুরাইশ বাহিনী অমুক দিন মক্কা থেকে বের হয়েছে সংবাদ দাতা আমাকে সঠিক সংবাদ বলে থাকলে তারা আজ অমুক জায়গায় অবস্থান করছে।’

সে ঠিক ঐ জায়গারই নাম বলল, যেখানে ঐ সময় কুরাইশ বাহিনী অবস্থান করছিল।

বৃদ্ধ নিজের কথা শেষ করে বলল, ‘আচ্ছা তবে এখন বলুন, আপনারা কোন সম্প্রদায়ভুক্ত।’

উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘আমরা এক পানি হতেই (উদ্ভূত)।’

এ কথা বলেই তিনি ফিরে চললেন। আর বৃদ্ধ বক্ বক্ করতেই থাকল, কোন্ পানি হতে? ইরাকের পানি হতে কি?

মক্কা বাহিনী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যলাভ

ঐ দিনই সন্ধ্যায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) শত্রুদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য নতুনভাবে এক গোয়েন্দা বাহিনী গঠন করেন। এ বাহিনীর ব্যবস্থাপনার জন্য আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ), যুবাইর ইবনু ‘আউওয়াম (রাঃ) এবং সা‘দ ইবনু ওয়াক্কাস (রাঃ)-কে প্রেরণ করেন। এ গোয়েন্দা বাহিনী সরাসরি বদরের প্রস্রবণে গিয়ে পৌঁছেন। সেখানে দুজন গোলাম মক্কা বাহিনীর জন্য পানির পাত্র পূর্ণ করছিল। মুসলিম গোয়েন্দা বাহিনী এ দুজন পানি বাহককে বন্দী করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট হাযির করেন। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সালাতরত ছিলেন। উপস্থিত সাহাবীগণ ঐ গোলামদ্বয়কে বিভিন্ন ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকলেন। উত্তরে তারা বলল যে, ‘আমরা কুরাইশদের পানি বাহক। পাত্রে পানি ভর্তি করে আনার জন্য তারা আমাদের পাঠিয়েছিল।

তাদের এ জবাবে সাহাবীগণ সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। তাদের আশা ছিল যে, এরা দুজন হবে আবূ সুফইয়ানের লোক। কেননা, তাদের অন্তরে তখনো এ ক্ষীণ আশা বিরাজমান ছিল যে, তারা আবূ সুফইয়ানের বাণিজ্য কাফেলার উপর জয়যুক্ত হবেন। সুতরাং তারা ঐ গোলামদ্বয়কে কিছু মারপিটও করেন। তারা তখন বাধ্য হয়ে বলল যে, তারা আবূ সুফইয়ানের কাফেলার লোক। এ কথা বলার পর তাদের মারপিট বন্ধ করা হয়।

ততক্ষণে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সালাত আদায় শেষ করেছেন। সাহাবীগণের এহেন আচরণে বিরক্ত হয়ে তিনি বললেন, ‘গোলামদ্বয় যখন সত্য কথা বলল, তখন তোমরা তাদের মারপিট করলে, অথচ যখন মিথ্যা কথা বলল তখন তাদের ছেড়ে দিলে। আল্লাহর কসম! তারা দুজন সঠিক কথাই বলেছিল যে, তারা কুরাইশের লোক।’

এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঐ গোলাম দ্বয়কে বললেন, আচ্ছা এখন আমাকে কুরাইশদের সম্পর্কে খবর দাও।’

তারা বলল, ‘ঐ যে টিলাটি, যা উপত্যকার শেষ প্রান্তে দেখা যাচ্ছে, কুরাইশরা তারই পিছনে অবস্থান করছে।’

তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘তারা কতজন আছে’’? উত্তরে তারা বলল, ‘অনেক’।

তিনি আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তাদের সংখ্যা কত?’ তারা বলল ‘আমাদের তা জানা নেই।’

তিনি পুনরায় প্রশ্ন করলেন, ‘প্রত্যহ কটি উট জবেহ করা হয়?’

তারা জবাব দিল, ‘একদিন নয়টি এবং আরেক দিন দশটি’’। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মন্তব্য করলেন, ‘তাহলে তো তাদের সংখ্যা নয়শ ও এক হাজারের মাঝামাঝি হবে।’

তারপর তিনি তাদেরকে পুনরায় প্রশ্ন করলেন, ‘তাদের সঙ্গে সম্ভ্রান্ত কুরাইশদের কে কে আছে’’?

উত্তরে তারা বলল, ‘রাবী’আহর দু’পুত্র ‘উতবাহ ও শায়বাহ, আবুল বাখতারী ইবনু হিশাম, হাকীম ইবনু হিযাম, নাওফাল ইবনু খুওয়াইলিদ, হারিস ইবনু আমির, তোআইমাহ ইবনু আদী, নাযর ইবনু হারিস, যামআহ ইবনু আসওয়াদ, আবূ জাহল ইবনু হিশাম, উমাইয়া ইবনু খালফ এবং আরও অনেকে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘মক্কা তার কলিজার টুকরোগুলোকে তোমাদের পাশে এনে নিক্ষেপ করেছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button