বদরের যুদ্ধ পার্ট ২
মক্কায় বিপদের ঘোষণা
-
পক্ষান্তরে কুরাইশ কাফেলার অবস্থা এই ছিল যে, এর নেতা আবূ সুফইয়ান ছিলেন সুচতুর সতর্ক এবং অত্যন্ত সচেতন ব্যক্তি। এ প্রেক্ষিতে তিনি অব্যাহতভাবে পথের খবরাখবর নিতেই থাকতেন। পথে যে কাফেলার সঙ্গেই সাক্ষাৎ হতো তাদের সকলকেই তিনি পথের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। সুতরাং বিভিন্ন সূত্রে তিনি অবগত হতে সক্ষম হন যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর সাহাবীদেরকে কাফেলার উপর আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই তৎক্ষণাৎ তিনি যমযম ইবনু ‘আমর গিফারীকে কিছু পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মক্কা পাঠিয়ে দেন এবং তার মাধ্যমে এ মর্মে সংবাদ প্রেরণ করেন যে, ‘কাফেলা ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন, হিফাযতের জন্য সাহায্যের আশু প্রয়োজন।’ যমযম অত্যন্ত দ্রুত গতিতে মক্কায় আসে এবং আরব সমাজের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী নিজের উটের নাক চাপড়ালো, হাওদা উলটালো, জামা ছিঁড়ে ফেলল, মক্কা উপত্যাকায় উটের উপর দাঁড়িয়ে উচ্চৈঃস্বরে বলতে থাকল, ‘হে কুরাইশগণ! কাফেলা (আক্রান্ত কাফেলা, আক্রান্ত আবূ সুফইয়ানের সঙ্গে তোমাদের ধনমাল রয়েছে, তার উপর আক্রমণ চালানোর জন্য মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তার সাহাবীরা উদ্যত হয়েছেন। সুতরাং আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা যে, তোমরা তা পাবে। অতএব, সাহায্যের জন্য এগিয়ে চলো, এগিয়ে চলো।’
মক্কাবাসীগণের যুদ্ধ প্রস্তুত
-
কাফেলা আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ শ্রবণে সমগ্র মক্কা উপত্যকায় একদম হৈচৈ শুরু হয়ে গেল। চতুর্দিক থেকে সকলে দৌঁড়ে এসে বলতে থাকল, ‘মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তার সঙ্গী সাথীরা কি মনে করেছে যে, এ কাফেলাও ইবনু হাযরামীর কাফেলার মতই? না, না, কখনই না। আল্লাহর শপথ! এ কখনই সেরূপ নয়। শীঘ্রই তারা জানতে পারবে যে, আমাদের ব্যাপারটি অন্য রকম।’
-
সমগ্র মক্কা শহরে তখন দু’শ্রেণীর লোক চোখে পড়ছিল। এক শ্রেণীর লোক যুদ্ধ প্রস্তুতি সহকারে যুদ্ধ গমন করছিল এবং অন্যদল নিজের পরিবর্তে অন্যকে যুদ্ধে প্রেরণ করছিল। আর এভাবে প্রায় সবাই ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছিল। বিশেষ করে মক্কার সম্মানিত ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ কেউই পিছনে ছিলেন না। শুধু আবূ লাহাব নিজে না এসে তার একজন ঋণী ব্যক্তিকে পাঠিয়েছিলেন। আশে-পাশে অন্যান্য আরব গোত্রগুলোকেও তারা দিজেদের দলভুক্ত করে নিল। কুরাইশ গোত্রসমূহের মধ্যে একমাত্র বনু আদী ছাড়া আর কোন গোত্রই পিছনে রইল না। বনু আদী গোত্রের কোন লোকই এ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করল না।