বদরের যুদ্ধ পার্ট ৭
রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ
মহা মহিমান্বিত আল্লাহ রাববুল আলামীন এ রাত্রেই বৃষ্টি বর্ষণ করলেন। মক্কা বাহিনীর উপর বর্ষিত হল সেই বৃষ্টির ধারা মুষল ধারে। প্রবল বৃষ্টির কারণে মক্কা বাহিনীর অগ্রগমন কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হল। কিন্তু মুসলিম বাহিনীর উপর তা বর্ষিত হল আল্লাহ পাকের বিশেষ এক রহমত রূপে। আল্লাহর রহমতের এ বৃষ্টি শয়তানের সৃষ্ট অপবিত্রতা থেকে মুসলিমদের পবিত্র করে এবং ভূমিকে সমতল ও মসৃন করে। এর ফলে বেশ অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি করে। পদচারণার ক্ষেত্রে অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার কারণে তাদের অন্তরেও দৃঢ়তার ভাব সৃষ্টি হয়ে যায়।
গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কেন্দ্রস্থলের দিকে মুসলিম বাহিনীর অগ্রগমন
এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বীয় সেনাবাহিনীকে দ্রুত পথে চলার নির্দেশ দেন যাতে তাঁরা মুশরিক বাহিনীর পূর্বেই বদরের প্রস্রবণের নিকট পৌঁছে যান এবং প্রস্রবণের উপর নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। মুশরিক বাহিনী যাতে কোনভাবেই প্রস্রবণের উপর অধিকার লাভ করতে না পারে সেটাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। এ প্রেক্ষিতে তিনি এবং তাঁর বাহিনী এশার সময় বদরের নিকট অবতরণ করেন। এ সময় হাববাব ইবনু মুনযির (রাঃ) একজন অভিজ্ঞ সামরিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রশ্ন করলেন। ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এ স্থানে আপনি আল্লাহর নির্দেশ ক্রমে অবতরণ করেছেন, না শুধু যুদ্ধের কৌশল হিসেবেই আপনি এ ব্যবস্থা অবলম্বন করেছেন। ‘কেননা এর অগ্র কিংবা পশ্চাদগমনের আমাদের কোন সুযোগ নেই’’?
প্রত্যুত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘শুধু যুদ্ধের কৌশল হিসেবেই আমি এ ব্যবস্থা অবলম্বন করেছি।’
এ কথা শুনে হুবাব (রাঃ) বললেন, ‘এটা উপযুক্ত স্থান নয়। আরও সামনের দিকে এগিয়ে চলুন এবং কুরাইশ বাহিনীর সব চাইতে নিকটে যে প্রস্রবণ রয়েছে সেখানে শিবির স্থাপন করুন। তারপর অন্যান্য সব প্রস্রবণ বন্ধ করে দিয়ে নিজেদের প্রস্রবণের উপর চৌবাচ্চা তৈরি করে তাতে পানি ভর্তি করে নেব। এরপর কুরাইশ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হলে আমরা পানি পাব কিন্তু তারা তা পাবে না।
তাঁর এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘তুমি উত্তম পরামর্শ দিয়েছ।’ এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর বাহিনীকে অগ্রগমনের নির্দেশ প্রদান করলেন এবং অর্ধেক রাত যেতে না যেতেই কুরাইশ বাহিনীর সব চাইতে নিকটবর্তী প্রস্রবণের নিকট পৌঁছে গিয়ে শিবির স্থাপন করলেন। তারপর সেখানে একটি চৌবাচ্চা বা জলাধার তৈরি করে নিয়ে অবশিষ্ট সমস্ত প্রস্রবণ বন্ধ করে দিলেন।
নেতৃত্বের কেন্দ্র
প্রস্রবণের উপর মুসলিম বাহিনীর যখন শিবির স্থাপন কাজ সম্পন্ন হল তখন সা‘দ ইবনু মু’আয (রাঃ) প্রস্তাব করলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সৈন্য পরিচালনা বা নেতৃত্ব প্রদানের কেন্দ্রস্থল রূপে একটি ছাউনী নির্মাণ করে দেয়া হোক, যেখানে তিনি অবস্থান করবেন। আল্লাহ না করুন বিজয়ের পরিবর্তে আমাদেরকে যদি পরাজিত হতে হয় কিংবা অন্য কোন অসুবিধাজনক অবস্থার সম্মুখীন হতে হয় তাহলে পূর্ব থেকেই তাঁর নিরাপত্তার জন্য আমরা যেন প্রস্তুত থাকতে পারি। তাঁর এ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে সমর্থিত হলো। তারপর তাঁরা আরয করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমরা আপনার জন্য একটি বস্ত্রের ছাউনী নির্মাণ করার মনস্থ করেছি। আপনি ওর মধ্যে অবস্থান করবেন এবং আপনার সওয়ারীগুলো পাশে তৈরি অবস্থায় থাকবে। তারপর আমরা শত্রুদের সঙ্গে মোকাবেলা করব। যদি আল্লাহ পাক আমাদের মান মর্যাদা রক্ষা করে শত্রুদের উপর বিজয় দান করেন তবে সেটা তো হবে আমাদের একান্ত আকাঙ্ক্ষিত ও পছন্দনীয়। আর আল্লাহ না করুন যদি আমরা অন্য অবস্থার সম্মুখীন হই তবে আপনি সওয়ারীর উপর আরোহণ করে আমাদের কওমের ঐ সকল লোকের নিকট চলে যাবেন যারা পিছনে রয়ে গেছেন। হে আল্লাহর নাবী (সাঃ)! প্রকৃতপক্ষে আপনার পিছনে এরূপ লোকেরা রয়েছেন যাঁদের তুলনায় আপনার প্রতি আমাদের ভালবাসা বেশী নয়। যদি তারা অনুমান করতে পারতেন যে, আপনি যুদ্ধের সম্মুখীন হয়ে পড়বেন তবে কখনই তারা পিছনে থাকতেন না। আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের মাধ্যমে আপনাকে হিফাযত করবেন। তাঁরা আপনার শুভাকফঙ্ক্ষী এবং তাঁরা আপনার সঙ্গে থেকে যুদ্ধ করবেন।’
তাঁদের এ কথায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) খুশী হলেন ও তাদের প্রশংসা করলেন এবং তাঁদের কল্যাণের জন্যে দুআ করলেন।
সাহাবীগণ যুদ্ধ ক্ষেত্রের উত্তর পূর্বে একটি উঁচু টিলার উপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্য আরীশ (তাঁবু) নির্মাণ করলেন যেখান থেকে পূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রটি দৃষ্টি গোচর হতো। তারপর তাঁর ঐ আরীশের রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে সা‘দ ইবনু মু’আয (রাঃ)-এর নেতৃত্বে আনসারী যুবকদের একটি বাহিনী নির্বাচন করা হলো।