অন্যান্য টপিকইসলামিক খবরইসলামিক ঘটনাইসলামিক ছবি

বড়দের কথা অমান্যের পরিনাম

তখন হেফয খানায় পড়ি। ২৫ কি ২৬ পাড়া হেফয হয়েছে। বয়সটাও খুব বেশি না, ১৩ বছর হবে হয়ত। এই বয়সের চিন্তা চেতনা কেমন, তা বোধহয় সবারই জানা!

মা বাবার উপর নির্ভরশীল বয়স।

আর কিছু না জানলেও বায়না ধরার কৌশল ভালো ভাবেই জানা থাকে।

বায়না পূরণ না হলে জেদ বা রাগের তরিকাও হয় হারকিসিমের।

আমিও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না।

ইচ্ছে মতো বায়না ধরতাম।

বাবা মা তাদের সাধ্যমত পূরণ করার চেষ্টাও করতো। এবারের বায়নাটা ছিলো একটু ভিন্ন। অনেক দূরে পড়ার সুবাদে মোবাইল ব্যবহার করতাম আর একটু আগে থেকে।

এবার বাবাকে বললাম আমাকে একটা ভালো মোবাইল কিনে দেন। এটা পুরোনো হয়ে গেছে। বাবা ২৫০০ টাকা দিয়ে একটা নতুন অডিও ভিডিও মোবাইল কিনে দিলেন।

এক সপ্তাহ বাড়িতে থাকলাম।

মোবাইল সহ সময়টা ভালোই কাটলো।

যেদিন মাদরাসা যাওয়ার সময় হলো। কাহিনি শুরু হলো তখন থেকে।

(ওহ বলাই হয়নি আমি বড় ছেলে হওয়ায় বাবা আমাকে বাবা বলেই ডাকত)

তো কাল সকালে মাদরাসায় চলে যেতে হবে। রাতে বাবা বললেন, বাবা! এখন তো টাকা পয়সার সংকট তার মধ্যে আবার মোবাইল নিলা, তাই এবার একটু টাকা কম নিয়ে যাও। কিছুদিন পরে আবার তোমার হুজুরের কাছে পাঠাবো ।

আমার তো ভিতরটা জ্বলে উঠলো।

কোন ভাবেই মানতে পারছিনা।

আমার স্বভাবটা এমন ছিলো যে, কোন বিষয় মনঃপুত না হলে সরাসরি জেদ করে বসতাম না। তবে অন্য ভাবে রাগ দেখাতাম। রাত থেকেই আমি রেগেমেগে জ্বলে উঠছি। ঠিকমত খেলাম না। বাড়ির কারো সাথে ভালোভাবে কথাও বললাম না। সকালে বাবা আমাকে স্টেশনে রেখে আসতে গেলেন। বাবার সাথেও ভালোভাবে কথা বললাম না। বাবা অনেক উপদেশ দিলো কানে তুললাম না।

প্রতিবার মাদরাসায় যাওয়ার সময়ই বাবা অনেক নসিহত করেন। মানলে অনেক উপকার পাই। কিন্তু এবার কোন উপদেশ ই আমলে নিলাম না।কারন ভিতরে তো জেদ, টাকা কম দিয়েছে।

বাবা অনেকক্ষন পাশে থাকলো।

অনেক কিছু কিনে দিলো তবুও আমার রাগ কমলো না।

পরিশেষে বাবা কয়েকবার বললো, বাবা! মোবাইলটা নিচের পকেটে ভালো করে রাখো।

আমি বললাম আপনাকে শিখায়া দিতে হবেনা! কথাটা এখনো আমার মনে আছে।

এভাবেই বলেছিলাম।

বাবা মনে হয় কষ্ট পেয়েছিলো।

ট্রেন ছেড়েদিলো, যতোদূর দেখা যায় বাবা দাড়িয়ে থাকলো।

একসময় বাবা অদৃশ্য হয়ে গেলো।

আমি দরজার পাশে দাড়িয়ে ছিলাম।

লোকজন তেমন নেই। আমরা ছাত্র কয়জন, আর চার পাঁচজন হবে।

একটা স্টেশন বের হলো। দুজন নেমে গেলো। আমি মোবাইলটা বের করার জন্য পকেটে হাত দিলাম।

একি! পকেটে তো মোবাইল নেই!

কই গেলো! ছাত্র ভাইদের এবং পাশের লোকদের বললাম মোবাইলটা দেখছো?

কেউ বলতে পারলো না।

একজন বললো যে দুইজন নেমে গেছে

ওরাই হয়ত মেরে দিছে!

চেহারা পকেটমারের মতই।

শুরুর স্টেশন থেকে এই স্টেশন দশ মিনিটও হয় নাই।

এর মধ্যেই মোবাইলটা গায়েব!

বাবার কথাগুলো মনে পড়লো।

আজীবনের জন্য শিক্ষা পেলাম।

বড়দের কথা মানতে হয়,

না মানলেই বিপদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker