মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ পার্ট ৭
কা‘বা ঘরের ভিতরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সালাত আদায় এবং কুরাইশদের নিকট ভাষণ প্রদান (الرَّسُوْلُ ﷺ يُصَلِّيْ فِي الْكَعْبَةِ ثُمَّ يَخْطُبُ أَمَامَ قُرَيْشٌ):
এরপর নাবী কারীম (সাঃ) ভিতর থেকে কা‘বাহ ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। উসামা ও বিলাল (রাঃ) ভিতরেই ছিলেন। অতঃপর তিনি দরজার সামনের দেয়ালের অভিমুখী হন এবং দেয়াল থেকে মাত্র তিন হাত দূরত্বে থেমে যান। এ অবস্থায় নাবী কারীম (সাঃ)-এর বাম পাশে থাকে দুটি স্তম্ভ, ডান পাশে একটি এবং পিছনে তিনটি। ঐ সময়ে কা‘বাহ ঘরটি ছিল ছয় স্তম্ভবিশিষ্ট। অতঃপর নাবী কারীম (সাঃ) সেখানেই সালাত আদায় করেন। সালাতান্তে আল্লাহর ঘরের ভিতরের অংশগুলো তিনি ঘুরে ফিরে দেখতে থাকেন এবং তাকবীর ও একত্ববাদের আয়াতগুলো উচ্চারণ করতে থাকেন। অতঃপর কা‘বা ঘরের দরজা খুলে দেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কী করেন তা প্রত্যক্ষ করার জন্য বিশাল সংখ্যক কুরাইশ কা‘বাহ ঘরের সম্মুখে কাতারবন্দী অবস্থায় ছিল। দরজার দু’ অংশ ধারণ করে নিম্নভাগে দন্ডায়মান কুরাইশদের সম্বোধন করে নাবী কারীম (সাঃ) বললেন,
(لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، صَدَقَ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ، أَلَا كُلُّ مَأْثُرَةٌ أَوْ مَالٌ أَوْ دَمٌ فَهُوَ تَحْتَ قَدَمَيَّ هَاتَيْنِ، إِلَّا سِدَانَةَ الْبَيْتِ وَسِقَايِةَ الْحَاجِّ، أَلَاوَقُتَيْلُ الْخَطَأِ شِبْهُالْعَمَدِ ـ السَّوْطُ وَالْعَصَا ـ فَفِيْهِ الدِّيَةُ مُغَلَّظَةٌ، مِائَةٌ مِّنْ الْإِبِلِ أَرْبَعُوْنَ مِنْهَا فِيْ بُطُوْنِهَا أَوْلَادٌ.
يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٌ إِنَّ اللهَ قَدْ أَذْهَبَ عَنْكُمْ نخْوَةَ الْجَاهِلِيَّةِ وَتَعَظَّمَهَا بِالْآبَاءِ، النَّاسُ مِنْ آدَمٍ، وَآدَمُ مِنْ تُرَابٍ
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি তাঁর অঙ্গীকার পূর্ণ করে দেখিয়েছেন, তাঁর বান্দাদের সাহায্য করেছেন এবং তিনি একক ভাবেই সমস্ত দলকে পরাজিত করেছেন। শুনে রাখ, আল্লাহর ঘরের চাবি সংরক্ষণ এবং হাজীদের পানি পান করানো সম্মান ছাড়া সমস্ত সম্মান, অথবা র্পূণতা, অথবা রক্ত প্রবাহিত করা আমার এ দুই পদতলে রইল। স্মরণ রেখ, ভুলবশত হত্যা যা লাঠি সোটা দ্বারা হয়ে থাকে, তা ইচ্ছাকৃত হত্যার অন্তর্ভুক্ত হবে এবং তার জন্য শোনিতপাতের খেসারত দিতে হবে। অর্থাৎ একশ উট দিতে হবে যার মধ্যে ৪০টি হবে গর্ভবতী।
হে কুরাইশগণ! আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের হতে জাহেলিয়াত যুগের অহংকার এবং পূর্ব পুরুষদের গৌরব খতম করে দিয়েছেন। সমস্ত মানুষ আদম (আ)-এর সন্তান এবং তিনি ছিলেন মাটির তৈরি।’
এরপর পরবর্তী আয়াতটি পাঠ করেন,
{يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوْا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ} (سورة الحجرات : 13)
‘হে মানব জাতি! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা থেকে সৃষ্টি এবং সম্প্রদায় ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যেন তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট ঐ ব্যক্তি অধিক সম্মানিত যে সর্বাধিক পরহেজগার। অবশ্যই আল্লাহ সব কিছু জ্ঞাত আছেন এবং সব খবর রাখেন। [আল-হুজুরাত (৪৯) : ১৩]
অদ্য কারো কোন নিন্দা নেই (لَا تَثْرِيْبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ):
অতঃপর নাবী কারীম (সাঃ) বললেন, يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٌ مَا تَرَوْنَ أَنِّيْ فَاعِلٌ بِكُمْ؟ ‘ওগো কুরাইশ জনগণ! তোমাদের কী ধারণা, তোমাদের সঙ্গে আমি কিরূপ ব্যবহার করব বলে মনে করছ? ’
সকলে বলল, ‘খুব ভাল। আপনি সদয় ভাই এবং সদয় ভাইয়ের পুত্র।’
নাবী কারীম (সাঃ) বললেন, (فَإِنِّيْ أَقُوْلُ لَكُمْ كَمَا قَالَ يُوْسُفُ لِإِخْوِتِهِ: {لاَ تَثْرَيبَ عَلَيْكُمُ} اِذْهَبُوْا فَأَنْتُمْ الطُّلَقَاءُ) ‘তাহলে তোমরা জেন রাখ যে, আমি তোমাদের সঙ্গে ঠিক সেরূপ কথাই বলছি যেমনটি ইউসুফ (আঃ) তাঁর ভাইদের সঙ্গে বলেছিলেন যে, আজ তোমাদের জন্য কোন নিন্দা নেই।’ যাও, আজ তোমাদের সকলকে মুক্তি দেয়া হল।’
কা‘বা ঘরের চাবি যার অধিকার তাকেই দেয়া হল (مِفْتَاحُ الْبَيْتِ إِلٰى أَهْلِهِ):
এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মাসজিদুল হারামে বসে পড়লেন। আলী (রাঃ) বলেছেন, ‘যার হাতে চাবি ছিল তিনি নাবীজী (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘হুজুর! আমাদের জন্য হাজীদের পানি পান করানোর সম্মানের সহিত কা‘বা ঘরের চাবি সংরক্ষণের সম্মানও একই সঙ্গে প্রদান করুন।’ আল্লাহ আপনার উপর রহম করুক। অন্য এক বর্ণনা মোতাবেক এ আরযটি আব্বাস (রাঃ) করেছিলেন। অতঃপর নাবী কারীম (সাঃ) বললেন, উসমান বিন ত্বালহাহ কোথায়? তাঁকে ডাকা হলে নাবী কারীম (সাঃ) বললেন, (هَاكَ مِفْتَاحَكَ يَا عُثْمَانُ، الْيَوْمَ يَوْمَ بِرٌّ وَوَفَاءٌ) উসমান! এ নাও তোমার চাবি। অদ্য পুণ্য এবং ওয়াদা পুরণের দিন। তাবাকাত ইবনু সা‘দ (রাঃ)-এর বর্ণনায় আছে যে, চাবি দেয়ার সময় নাবী কারীম (সাঃ) আরও বলেছিলেন,
(خُذُوْهَا خَالِدَةً تَالِدَةً، لَا يَنْزِعُهَا مِنْكُمْ إِلَّا ظَالِمٌ، يَا عُثْمَانُ إِنَّ اللهَ اِسْتَأَمنكُمْ عَلٰى بِيْتِهِ، فَكِلُوْا مِمَّا يَصِلُ إِلَيْكُمْ مِنْ هٰذَا الْبَيْتِ بِالْمَعْرُوْفِ
‘সর্বক্ষণের জন্যই তুমি এ চাবি গ্রহণ কর। তোমার নিকট থেকে এ চাবি সেই ছিনিয়ে নিবে যে অত্যাচারী হবে। উসমান! আল্লাহ নিজ ঘরের জন্য তোমাকে বিশ্বাসভাজন করেছেন। অতএব, আল্লাহর এ ঘরে ন্যায়সঙ্গত উপায়ে তুমি যা পাবে তা ভোগ করবে।’