অন্যান্য টপিকইসলামিক খবরইসলামিক ঘটনাইসলামিক ছবিনবীদের জীবনী

মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ পার্ট ৮

 

কা‘বাহর ছাদে বিলালের আযান (بِلَالٌ يُؤَذِّنُ عَلٰى الْكَعْبَةِ):

তখন সালাতের সময় হয়েছিল তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ প্রদান করলেন কা‘বাহর ছাদে উঠে আযান দিতে। সে সময় কা‘বার বারান্দায় উপবিষ্ট ছিল আবূ সুফইয়ান বিন হারব, আত্তাব বিন আসীদ এবং হারিস বিন হিশাম।

আত্তাব বলল, ‘আল্লাহ উসাইদকে এ সম্মান প্রদান করেছেন যে, তিনি এ আযান ধ্বনি শুনেন নি, নতুবা তাকে এক অপছন্দনীয় জিনিস (আযান) শুনতে হত। এর প্রেক্ষিতে হারিস বলল, ‘শোন! আল্লাহর কসম! আমি যদি জানতে পারি যে, তা সত্য তাহলে আমি তাদের অনুসারী হয়ে যাব।’

এ প্রেক্ষিতে আবূ সুফইয়ান বলল, ‘দেখ! আল্লাহর কসম! আমি  কিছুই বলব না, কারণ, যদি আমি কিছু বলি তবে এ কঙকরগুলো আমার সম্পর্কে সংবাদ দেবে। এরপর নাবী কারীম (সাঃ) তাদের নিকট আগমন করলেন এবং বললেন, ‏(‏لَقَدْ عُلِمْتُ الَّذِيْ قُلْتُمْ) ‘এখন তোমরা যে আলাপ করলে তা আমাকে জানানো হয়েছে।’ অতঃপর তিনি তাদের আলাপের কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করলেন। এ প্রেক্ষিতে হারিস এবং আত্তাব বলে উঠল, ‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল (সাঃ)। আল্লাহর কসম! আমাদের সঙ্গে এমন কেউ ছিল না যে, আমাদের কথাবার্তা শুনতে পারে। এ রকম কিছু হলে আমরা বলতাম যে, সে ব্যক্তিই আমাদের কথাবার্তা নাবী কারীম (সাঃ)-এর নিকট পৌঁছে দিয়েছে (তা না হলে তিনি খবর পেলেন কি ভাবে?)’

বিজয়োত্তর শোকরানা সালাত (صَلَاةُ الْفَتْحِ أَوْ صَلَاةُ الشُّكْرِ):

সে দিনই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উম্মু হানী বিনতে আবূ ত্বালীবের ঘরে গমন করেন। সেখানে গোসল করেন এবং তাঁর ঘরেই আট রাকাত সালাত আদায়  করেন। সূর্যোদয় ও দ্বিপ্রহরের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি এ সালাত আদায় করেন। এ কারণেই কেউ কেউ বিজয়োত্তর শোকরানা চাশতের সালাত বলে ধারণা করেছেন। উম্মু হানী তাঁর দুজন দেবরকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‏(‏قَدْ أَجَرْنَا مَنْ أَجَرْتِ يَا أَمُّ هَانِئٍّ‏)‏ ‘হে উম্মু হানী তুমি যাদেরকে আশ্রয় দিয়েছ আমিও তারেকে আশ্রয় দিলাম।’ তাঁর এ ঘোষণার কারণ ছিল উম্মু হানীর ভাই আলী (রাঃ) বিন আবূ ত্বালিব এ দুজনকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। এ কারণে উম্মু হানী এ দুজনকে ঘরের দরজা বন্ধ করে গোপনে রেখেছিলেন। নাবী কারীম (সাঃ) যখন সেখানে গমন করলেন তখন তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন এবং উপর্যুক্ত এ ঘোষণা দিলেন।

বড় বড় পাপীদের রক্ত মূল্যহীন সাব্যস্ত করা হল (إِهْدَارُ دَمِ رِجَالٍ مِّنْ أَكَابِرِ الْمُجْرِمِيْنَ):

মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বড় বড় পাপীদের মধ্য থেকে নয় ব্যক্তির রক্ত মূল্যহীন সাব্যস্ত করে নির্দেশ প্রদান করেন যে, যদি তাদেরকে কা‘বার পর্দার নীচেও পাওয়া যায় তবুও তাদের হত্যা করা হবে। তাদের নাম হচ্ছে যথাক্রমে (১) আবদুল উযযা বিন খাতাল, (২) আব্দুল্লাহ বিন সা‘দ বিন আবূ সারাহ, (৩) ইকরামা বিন আবূ জাহল, (৪) হারিস বিন নুফাইল বিন ওয়াহাব, (৫) মাকীস বিন সাবাবাহ, (৬) হাব্বার বিন আসওয়াদ, (৭) ও (৮) ইবনু খাতালের দুই দাসী যারা কবিতার মাধ্যমে নাবী কারীম (সাঃ)-এর বদনাম রটাত, (৯) সারাহ যে আব্দুল মুত্তালিবের সন্তানদের মধ্যে কারো দাসী ছিল। এর নিকটে হাতেব লিখিত পত্রখানা পাওয়া গিয়েছিল।

ইবনু আবি সারাহর ব্যাপার ছিল উসমান ইবনু আফফান তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হলেন এবং তার প্রাণ রক্ষার জন্য সুপারিশ করলেন। নাবী (সাঃ) তাকে ক্ষমা করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করলেন। কিন্তু এর পূর্বে নাবী কারীম (সাঃ) এ আশায় দীর্ঘক্ষণ নীরব থাকলেন যে, কোন সাহাবী উঠে এসে তাকে হত্যা করবে। কারণ এ ব্যক্তিই ইতোপূর্বে একবার ইসলাম গ্রহণ করে মদীনা হিজরত করেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সে পুনরায় মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল (তবুও তার পরবর্তী সময়ের কার্য কলাপ ইসলামের সৌন্দর্য বর্ধনে আয়নাস্বরূপ ছিল, আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হউন)।

ইকরামা বিন আবূ জাহল পলায়নের অবস্থায় ইয়ামানের পথ ধরে চলে যায়। কিন্তু তার স্ত্রী নাবী (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করলে তিনি তাকে আশ্রয় প্রদান করেন। এরপর সে ইকরামার পশ্চাদনুসরণ করে তাকে নিয়ে আসে। মক্কায় প্রত্যাবর্তনের পর সে ইসলাম গ্রহণ করে এবং তার ঈমানের অবস্থা খুব ভাল থাকে।

ইবনু খাতাল কা‘বা ঘরের পর্দা ধরে ঝুলছিল। একজন সাহাবী নাবী (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে তাঁকে তার সম্পর্কে অবগত করালে তিনি তাকে হত্যার নির্দেশ প্রদান করেন ফলে তাকে হত্যা করা হয়। মাকীস বিন সাবাবাকে নুমায়লাহ বিন আব্দুল্লাহ হত্যা করেন। মাকিসও পূর্বে মুসলিম হয়েছিল। কিন্তু পরে এক আনসারীকে হত্যা করে মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল।

হাব্বার বিন আসওয়াদ হচ্ছে সে ব্যক্তি যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কন্যা যায়নাব (রাঃ)-কে তাঁর হিযরতের প্রাক্কালে তীক্ষ্ণ অস্ত্র বিদ্ধ করেছিল যাতে তিনি উটের হাওদা হতে এক খন্ড কঠিন পাথরের উপর পড়ে যান এবং এর ফলে তাঁর গর্ভপাত হয়ে যায়। মক্কা বিজয়ের সময় এ ব্যক্তি পলায়ন করে। পরবর্তী সময়ে সে ইসলাম গ্রহণ করে। অতঃপর তার ঈমানের অবস্থা ভাল থাকে।

ইবনু খাতালের দু’ দাসীর একজনকে হত্যা করা হয়। দ্বিতীয় জন আশ্রয় প্রার্থনা করলে তাকে আশ্রয় দেওয়া হয়। অতঃপর সে ইসলাম গ্রহণ করে। অনুরূপভাবে সারাহর জন্য আশ্রয় চাওয়া হলে তাকে তা দেয়া হয় এবং পরে সে ইসলাম গ্রহণ করে (সার কথা হচ্ছে নয় জনের মধ্যে চার জনকে হত্যা করা হয় এবং পাঁচজনকে ক্ষমা করা হয়। এরা সকলেই ইসলাম গ্রহণ করে)।

হাফেজ ইবনু হাজার লিখেছেন, ‘যাদের রক্ত মূল্যহীন সাব্যস্ত করা হয় তাদের প্রসঙ্গে আবূ মাশ’আর হারিস বিন ত্বালাতিল খুযা’য়ীরও উল্লেখ রয়েছে। আলী (রাঃ) তাকে হত্যা করেন। ইমাম হাকিম এ তালিকায় কা‘ব বিন যুহাইরের উল্লেখ করেছেন, কা’বের ঘটনা প্রসিদ্ধ ছিল। পরে এসে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রশংসা করেন। এ তালিকাভুক্ত ছিল ওয়াহশী বিন হারব এবং আবূ সুফইয়ানের স্ত্রী হিন্দা বিনতে ‘উতবাহ যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তাদের মধ্যে ছিল ইবনু খাতালের দাসী আরনাব এবং উম্মু সা‘দ। এদের হত্যা করা হয়েছিল। ইবনু ইসহাক্বও অনুরূপ উল্লেখ করেছেন। এভাবে পুরুষদের সংখ্যা দাঁড়ায় আট এবং মহিলাদের সংখ্যা ছয়। এ পার্থক্যের কারণ এ হতে পারে যে, দু’ জন দাসী আরনব এবং উম্মু সা‘দ ছিল এবং পার্থক্য ছিল শুধু নাম উপনাম অথবা উপাধির।[1]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker