অন্যান্য টপিকইসলামিক খবরইসলামিক ঘটনাইসলামিক ছবিনবীদের জীবনী

মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ পার্ট ৯

সাফওয়ান বিন উমাইয়া এবং ফুযালাহ বিন উমাইয়ের ইসলাম গ্রহণ (إِسْلَامُ صَفْوَانِ بْنِ أُمَيَّةَ، وَفَضَالَةَ بْنِ عُمَيْرٍ):

সাফওয়ানের রক্ত মূল্যহীন সাব্যস্ত করা হয় নি, কিন্তু যেহেতু সে ছিল কুরাইশদের একজন বড় নেতা সেহেতু তার নিজ জীবনের ভয় ছিল যথেষ্ট এ কারণে সে পলায়ন করেছিল। উমায়ের বিন অহাব জোমাহী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে তার জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করেন। নাবী কারীম (সাঃ) তাকে আশ্রয় প্রদান করেন এবং এর প্রতীকস্বরূপ তাকে তাঁর সে পাগড়িটি প্রদান করেন মক্কায় প্রবেশ কালে যা তিনি নিজ মস্তকে বেঁধে রেখেছিলেন। উমায়ের যখন সাফওয়ানের নিকট পৌঁছল তখন সে জেদ্দা হতে ইয়ামান যাওয়ার উদ্দেশ্যে সমুদ্রে যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। উমায়ের তাকে ফিরিয়ে আনলেন। তাকে দু’ মাস সময় দেবার জন্য সে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে অনুরোধ জানালে তিনি বললেন, ‘তোমাকে চার মাস দেয়া হল।’ এরপর সাফওয়ান ইসলাম গ্রহণ করেন। তার স্ত্রী পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাদের উভয়ের বিবাহ বন্ধন পূর্ববৎ বহাল রাখলেন।

ফুযালাহ একজন বীর পুরুষ ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন তাওয়াফ করছিলেন তখন সে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর নিকট এসেছিল। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে তার গোপন কুমতলবের কথা বলে দিলে সে মুসলিম হয়ে যায়।

বিজয়ের দ্বিতীয় দিবসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ভাষণ (خُطْبَةُ الرَّسُوْلِ ﷺ الثَّانِيْ مِنْ الْفَتْحِ):

বিজয়ের দ্বিতীয় দিবসে ভাষণ দেয়ার জন্য আল্লাহর নাবী (সাঃ) জনতার সম্মুখে দন্ডায়মান হলেন। ভাষণের প্রারম্ভে আল্লাহর প্রশংসা ও স্তব-স্তুতি বর্ণনার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

‏(‏أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ اللهَ حَرَّمَ مَكَّةَ يَوْمَ خَلَقَ السَّمٰوَاتِ وَالْأَرْضِ، فَهِيَ حَرَامٌ بِحُرْمَةِ اللهِ إِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ، فَلَا يَحِلُّ لِاِمْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيِوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَّسْفِكَ فَيْهَا دَماً، أَوْ يَعْضُدُ بِهَا شَجَرَةً، فَإِنْ أَحَدٌتَرَخَّصَ لِقِتَالِ رَسُوْلِ اللهِ فَقُوْلُوْا‏:‏ إِنَّ اللهَ أَذِنَ لِرَسُوْلِهِ وَلَمْ يَأْذَنْ لَكُمْ، وَإِنَّمَا حَلَّتْ لِيْ سَاعَةً مِّنْ نَهَارٍ، وَقَدْ عَادَتْ حُرْمَتُهَا الْيَوْمَ كَحُرْمَتِهَا بِالْأَمْسِ، فَلْيُبَلِّغُ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ‏)

‘ওহে লোক সকল! আল্লাহ যেদিন আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সে দিন মক্কাকে হারাম (নিষিদ্ধ শহর) করে দিয়েছেন। এ কারণে কেয়ামত পর্যন্ত তা হারাম বা পবিত্র থাকবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী হবে তার এটা বৈধ হবে না যে, সে এখানে রক্তপাত ঘটাবে অথবা এখানকার কোন বৃক্ষ কর্তন করবে। কেউ যদি এ কারণে জায়েয মনে করে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এখানে যুদ্ধ করেছেন তবে তাকে বলে দাও যে, আল্লাহ স্বয়ং তাঁর রাসূল (সাঃ)-কে অনুমতি প্রদান করেছিলেন। কিন্তু তোমাদেরকে অনুমতি দেন নি এবং আমার জন্যও শুধুমাত্র দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তা বৈধ করেছিলেন। অতঃপর আজ তার পবিত্রতা অনুরূপ ফিরে এসেছে গতকাল তার পবিত্রতা অত:পর যারা উপস্থিত আছে তারা অনুপস্থিতদের নিকট এ বাণী পৌঁছে দিবে।

অন্য এক বর্ণনায় এতটুকু অতিরিক্ত রয়েছে যে, ‏لَا يَعْضِدُ شَوْكَهُ، وَلَا يَنْفِرُ صَيْدَهُ وَلَا تَلْتَقِطُ سَاقِطَتَهُ إِلَّا مَنْ عَرَّفَهَا، وَلَا يَخْتَلِىُ خَلَاهُ এখানে কোন কাঁটা কাটা বৈধ নয়, শিকার তাড়ান ঠিক নয় এবং পড়ে থাকা কোন জিনিস উঠানোও ঠিক নয় তবে সে ব্যক্তি নিতে পারবে যে, সে সম্পর্কে প্রচার করবে। তাছাড়া, কোন প্রকার ঘাস ও উপড়ানো যাবে না।

আব্বাস (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! কিন্তু  ইযখির ঘাসের অনুমতি দিন (আরবের প্রসিদ্ধ ঘাস যা উর্মির ন্যায় হয় এবং চা ও ঔষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়। কারণ, এটা কর্মকার এবং বাড়ির নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস) নাবী কারীম (সাঃ) বললেন, ‏(‏إِلَّا الْإِذْخِر) ‘বেশ, ইযখিরের অনুমতি রইল।’

ওই দিন বনু খুযা’আহ বনু  লাইসের এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল। কারণ, জাহেলিয়াত আমলে বনু লাইসের হাতে তাদের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সে সম্পর্কে বললেন,

‏(‏يَا مَعْشَرَ خُزَاعَةَ، اِرْفَعُوْ أَيْدِيَكُمْ عَنْ الْقَتْلِ، فَلَقَدْ كَثُرَ الْقَتِلُ إِنْ نَفَعَ، وَلَقَدْ قَتَلَتُمْ قِتْيَالًا لَأَدِّيَنَّهُ، فَمَنْ قَتَلَ بَعْدَ مَقَامِيْ هٰذَا فَأَهْلُهُ بِخَيْرِ النّٰظِرِيْنَ، إِنْ شَاءُوْا فَدَمٌ قَاتَلَهُ، وَإِنْ شَاءُوْا فَعَقَلَهُ‏)

‘ওহে খুযা’আহ সম্প্রদায়ের লোকজনেরা তোমরা নিজের হাতকে হত্যা ও খুন হতে নিবৃত্ত রাখ। কারণ, হত্যায় যদি কোন উপকার পাওয়া যেত তাহলে এ যাবত যত হত্যা সংঘটিত হয়েছে তা থেকে  কোন উপকার লাভ সম্ভব হত, কিন্তু কোথায় সে লাভ? তোমরা এমন এক জনকে হত্যা করেছ যার শোনিত পাতের খেসারত অবশ্যই আমাকে দিতে হবে। অতঃপর এ স্থানে যদি কেউ কাউকে হত্যা করে তবে নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের দুটি বিষয়ের অধিকার থাকবে। হয় তারা নিহত ব্যক্তির বিনিময় হত্যাকারীকে হত্যা করবে, কিংবা শোণিত পাতের খেসারত গ্রহণ করবে।

অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, এর পর ইয়ামানের আবূ শাহ নামক এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আরয করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমার জন্য তা লিখে দিন।’ নাবী কারীম (সাঃ) বললেন, ‘আবূ শাহর জন্য লিখে দাও।’

আনসারদের সন্দেহপরায়ণতা (تَخَوَّفُ الْأَنْصَارِ مِنْ بَقَاءِ الرَّسُوْلُ ﷺ فِيْ مَكَّةَ):

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন মক্কা বিজয়ের পরিপূর্ণতা অর্জন করলেন এবং এটা সর্বজনবিদিত ব্যাপার যে মক্কাই ছিল নাবী কারীম (সাঃ)-এর আবাসস্থল এবং জন্মভূমি ও মাতৃভুমি, এ প্রসঙ্গে আনসারগণ পরস্পর বলাবলি করতে থাকলেন যে, নিজ শহর ও জন্মভূমি বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কি মক্কাতেই অবস্থান করতে থাকবেন? ঐ সময় তিনি হাত দু‘টো উত্তোলন করে সাফা পাহাড়ের উপর প্রার্থনারত ছিলেন। প্রার্থনা শেষে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কী কথা বলেছ? তারা বললেন, ‘তেমন কিছু নয় হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)।’ কিন্তু আল্লাহর নাবী (সাঃ) বিষয়টি জানাবার ব্যাপারে মত পরিবর্তন না করায় তাঁরা তাঁদের আলোচনার বিষয়টি তাঁর নিকট প্রকাশ করলে তিনি বললেন, (‏مَعَاذَ اللهِ، الْمَحْيَا مَحْيَاكُمْ، وَالْمَمَاتُ مَمَاتُكُمْ‏) ‘আল্লাহর আশ্রয়, এখন জীবন এবং মরণ তোমাদের সঙ্গেই হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button