মুসলিম হওয়ার শর্তা বলি- পার্ট -১
ইসলাম অর্থ সমর্পণ, আর ঈমান অর্থ বিশ্বাস। তাই আল্লাহ তাআলার সামনে পরিপূর্ণ সমর্পণকারীকে মুসলিম এবং আল্লাহ ও তাঁর বিধানকে পূর্ণরূপে বিশ্বাসকারীকে বলা হয় মুমিন। ইসলাম ও ঈমান একটি অন্যটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অর্থাৎ একটি ছাড়া অন্যটির অস্তিত্ব সম্ভব নয়।
- আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার ওপর সবচেয়ে বড় বিধান হলো ঈমান। ঈমান হলো ইসলামকে একমাত্র সত্য ধর্ম মেনে তা গ্রহণ করে নেওয়া। ইসলাম আকাইদ ও আহকাম, তথা বিশ্বাস ও বিধানাবলির সমষ্টি। ইসলামের বর্ণিত সঠিক আকাইদ, ইসলামের প্রদত্ত শরিয়ত মেনে নেওয়ার নাম ঈমান। এগুলোর অস্বীকার করা কুফর। ঈমান ও ইসলামের মৌলিক ও প্রাথমিক বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন বিশিষ্ট ফতোয়া গবেষক ও মুহাদ্দিস মুফতি মাহমুদ হাসান
আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি আস্থার ভিত্তিতে সব মেনে নেওয়া
-
ঈমান হলো, ওই সত্য সঠিক আকিদাকে স্বীকার করা ও সত্য বলে বিশ্বাস করা, যা ওহির দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে ওহি কোরআন ও সুন্নাহরূপে সংরক্ষিত আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে ইনশাআল্লাহ। ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো, কোনো বিষয়কে শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি আস্থার ভিত্তিতে সন্দেহাতীতভাবে মেনে নেওয়া ও বিশ্বাস করা। স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার পর ঈমান আনার কিছুই নেই। চোখে দেখা বিষয়কে তো বেঈমানরাও স্বীকার করে।
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও দৃশ্যমান বস্তুগুলো বা সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা বোঝা যায় এমন বিষয়গুলো ঈমানের বিষয়বস্তু নয়। এসব তো মানুষ এমনিতেই মেনে নেয়। এতে ঈমান আনা না আনার প্রশ্নই অবান্তর। মুমিনকে তো এ জন্য মুমিন বলা হয় যে সে না দেখা বিষয় শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সংবাদের ওপর ভিত্তি করেই মেনে নিয়েছে ও বিশ্বাস করেছে।
-
আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদের শুরুতেই মুমিনের এই বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন, ‘আলিফ লাম মীম—এটি সেই কিতাব, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি হিদায়াত, এমন ভীতি অবলম্বনকারীদের জন্য, যারা অদৃশ্য জিনিসগুলো বিশ্বাস রাখে এবং সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা কিছু দিয়েছি তা থেকে (আল্লাহর সন্তোষজনক কাজে) ব্যয় করে। আর যারা ঈমান রাখে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতেও এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতেও এবং তারা পরকালে পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখে। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১-৫)
ইসলাম হলো বিশ্বাসের সঙ্গে সমর্পণ
ইসলাম গ্রহণের অনিবার্য শর্ত—বান্দা নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করবে। তাঁর প্রতিটি আদেশ শিরোধার্য মনে করবে, মনে-প্রাণে কবুল করবে, অন্তরে কোনো দ্বিধা থাকবে না। মুমিনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সমর্পণ, আর ইবলিস ও তার অনুসারীদের বৈশিষ্ট্য বিপরীত যুক্তি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে নিজেকে নির্বোধ করেছে সে ব্যতীত ইবরাহিমের ধর্মাদর্শ হতে আর কে বিমুখ হবে। পৃথিবীতে তাকে আমি মনোনীত করেছি; আর আখিরাতেও সে অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম। তার প্রতিপালক যখন তাকে বলেছিলেন, আত্মসমর্পণ করো, সে বলেছিল, জগৎসমূহের প্রতিপালকের নিকট আত্মসমর্পণ করলাম। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৩০-১৩১)
ঈমান অবিচল বিশ্বাসের নাম
ঈমান অটল ও দৃঢ় বিশ্বাসের নাম। সংশয় ও দোদুল্যমানতার মিশ্রণ এখানে হতে পারে না। দৃঢ় বিশ্বাস না হলে তা ঈমান নয়। অনুমান আর কল্পনা-কুসংস্কারের কোনো অবকাশ তাতে নেই।
কোরআনে কারিমের ইরশাদ—‘তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনে, অতঃপর সন্দেহ পোষণ করে না। ’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১৫)
সংশয় ও দোদুল্যমানতা কাফির ও মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য, মুমিনের নয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের ওপর ঈমান আনে, তারা নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা জিহাদে অব্যাহতি পাওয়ার প্রার্থনা তোমার নিকট করে না। আল্লাহ মুত্তাকিদের সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। তোমার নিকট অব্যাহতি প্রার্থনা শুধু ওরাই করে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান আনে না এবং যাদের চিত্ত সংশয়যুক্ত। ওরা তো আপন সংশয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৪৪-৪৫)