ইসলামিক ঘটনা

রহস্যে ঘেরা বাবুই পাখির বাসা

এই কবিতাংশের সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। সকল পাখির চাইতে বাবুই পাখির বাসা সত্যিই ভিন্ন। অদ্ভুত সব শিল্পের কারুকার্য খচিত এর বাসা। সকল পাখিই গাছের ডালে, বাড়ির কার্ণিশে, পাহাড়ে সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাসা বাঁধে।

কিন্তু বাবুই কেন এই অদ্ভুত প্রজাতির বাসা বানায়? এর পেছনে কি কোন উদ্দেশ্য বা কারণ আছে? হ্যাঁ তার এই বাড়ি বানানোর পেছনে রয়েছে বিচিত্র সব তথ্য।

বাসা তৈরিতে নিপুণ বলে বাবুই পাখিকে অনেকে তাঁতি পাখি বা বুননী পাখিও বলে। দূর থেকে আমাদের মনে হয়, মুক্ত জীবন যাপনকারী কিছু পাখির মতো পুরুষ বাবুই ও নারী বাবুই জোড়ায় জোড়ায় বাস করে। বাসা তৈরি করা, ডিমে তা দেয়া, বাচ্চা ফোটানো, বাচ্চার যত্ন নেয়া ইত্যাদি কাজ দু’জনে মিলেমিশে করে।

আসলে তা মোটেই সঠিক না। এদের বসবাস, বাসা তৈরী ও বংশ বৃদ্ধিতে লুকিয়ে আছে অদ্ভুত এক রহস্য। ভারতের একজন খ্যাতিমান পাখি বিশারদ এক অদ্ভুত তথ্য দিয়েছেন। খুব কাছে থেকে তাঁর তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ১৯৩০ সালে এ রহস্যের  কথা জানতে পারেন।

বাবুই পাখি দেখতে অনেকটা চড়ুই পাখির মতো। পুরুষ বাবুই দেখতে খুব সুন্দর; এর গায়ের রঙ উজ্জ্বল সোনালী হলুদ। একটা পুরুষ বাবুই দু’য়ের অধিক যে কোন সংখ্যক নারী বাবুই স্ত্রী হিসেবে রাখতে পারে। তবে কোন স্ত্রীর মনে আঘাত দিয়ে সে একাধিক স্ত্রী পোষার ঝামেলায় যায় না।

স্ত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি করার ব্যাপারটি সে খুব সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে ঘটায়। সে কয়টা স্ত্রী দেখা-শোনা করতে পারবে, তা নির্ভর করে তার বাসা তৈরির কারিগরি দক্ষতা ও ক্ষমতার উপর। বাসা তৈরির সব ঝামেলা পোহাতে হয় একা পুরুষ বাবুইকে। বাসা তৈরিতে স্ত্রী বাবুই মোটেও সাহায্য করে না।

বাবুই পাখির বাসা দেখতে অনেকটা ল্যাবরেটরীতে ব্যবহৃত বক্স যন্ত্রের মতো। বাবলা বা তালগাছে বাবুই বাসা তৈরী করে। অনেক সময় খেঁজুর গাছে বা অন্যান্য বড় বড় গাছেও এদের বাসা ঝুলতে দেখা যায়। যে গাছে তারা বাসা তৈরী করে, সেই গাছকে একটি কলোনী বানিয়ে ফেলে।

প্রবল বাতাসের হাত থেকে বাসাকে রক্ষা করার জন্য এরা সাধারণত নির্বাচিত গাছের উত্তর ভাগেই বাসা তৈরী করে। পুরুষ বাবুই বাসা অর্ধেক তৈরী করে ফেললেও নারী বাবুই দল বেঁধে উড়ে আসে বাসা দেখার জন্য। তখন কলোনীতে হৈ চৈ পড়ে যায়। পুরুষ বাবুই বাসা তৈরীতে কি পরিমাণ দক্ষতা ও বুদ্ধি ঢেলেছে নারী বাবুই তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে।

এভাবে পর্যবেক্ষণের পর কোন বাসা নারী বাবুই এর ভোট পায়, কোন বাসা ভোট পায় না। নারী বাবুই যখন বাসা দেখতে থাকে পুরুষ বাবুই তখন আশংকা, উত্তেজনায় ডানা ঝাপটাতে থাকে।

এর কারণ কোন বাসা নারী বাবুই এর ভোট পেলে মানে পছন্দ হলে সাথে সাথে সে ঐ বাসা দখল করে বসে এবং পুরুষ বাবুইকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। আর দেরী না করে পুরুষ বাবুই ঐ অর্ধ সমাপ্ত বাসাতেই নারী বাবুই এর সঙ্গে সংসার পাতে এবং সুখি দাম্পত্য জীবন শুরু করে।

এভাবে তাদের নতুন সম্পর্ক পাকা হয়। তারপর পুরুষ বাবুই পুনরায় বাসা তৈরীর বাকিটা কাজ শেষ করে। আর ওদিকে তার স্ত্রী বাসায় বসে ডিম পাড়ে, বাচ্চা ফোটায় এবং বাচ্চাদের লালন পালন করে। এ কাজে পুরুষ বাবুই খুব সাহায্য করে না। তবে বাসা তৈরী সম্পূর্ণ শেষ হলে কিছুটা করে।

এভাবে একটা বাসা হলে কয়েক হাত দূরে আর একটা বাসা তৈরীতে লেগে যায় পুরুষ বাবুই। এখানেও একই ব্যাপার ঘটে। বাসা অর্ধেক তৈরী হলে কোথা হতে উড়ে আসে এক নারী বাবুই। সে বাসা দেখে, পছন্দ হলে দখল করে নেয় বাসা এবং বাসা নির্মাতাকে।

কোন কোন গাছে দেখা যায় পরিত্যক্ত বা অর্ধ সমাপ্ত বাসা। বাসাগুলোর ঐ অবস্থার কারণ হল- কোন নারী বাবুই ওই বাসাগুলি পছন্দ করেনি। তাই ওই বাসাগুলো ছেড়ে অন্য কোথাও সংসার পেতেছে।  

দ্বীনি কথা শেয়ার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।

]]>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker