রাসূল (সাঃ) এর প্রতি ভালোবাসার একটি সুন্দর ঘটনা
রাসূল (সাঃ) এর প্রতি ভালোবাসার একটি সু…
হযরত জায়েদ (রাঃ), উনার পিতার নাম হারেছা, যিনি খ্রিষ্ট ধর্মানুসারি ছিলেন। জায়েদ (রাঃ) যখন ছোট ছিলেন তখন মায়ের সাথে কোথাও যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে তারা ডাকাতের
কবলে পড়লেন। ডাকাতরা তাদের সর্বস্ব লুট করে নিয়ে গেল। ছোট বালক জায়েদ সহ অনেককে ডাকাতরা বন্দী করল। একদিন জায়েদকে বিক্রি করে দেয়া হলো। হাকিম নামে এক লোক জায়েদকে কিনে নিলেন। হাকিম ছিলেন হযরত খাদিজা (রাঃ)-এর ভাইয়ের ছেলে। হাকিম জায়েদকে এনে খালা খাদিজার হাতে সমর্পণ করলেন। জায়েদকে তিনি কাজের জন্য রেখে দিলেন। খাদিজার ঘরে বালক জায়েদ বড় হতেভলাগলেন। যখন হযরত খাদিজার সাথে মহানবী (সাঃ)-এর বিয়ে হলো তখন খাদিজা বালক জায়েদকে স্বামীর খেদমতে নিয়োগ করলেন।
জায়েদ হযরত খাদিজার কাছে মায়ের চেয়েও বেশী আদর, আর মহানবী (সাঃ)-এর কাছে পেলেন বাবার আদর। এমনি করে জায়েদের দিনগুলো সুখে কাঁটছিল। তবে একদিন ঘটল এক ঘটনা।
একদল হজ্ব যাত্রী কা’বাঘর যিয়ারত করতে মক্কায় এলো।
তাদের সাথে হযরত জায়েদের দেখা হলে যাত্রীদের একজন
হযরত জায়েদকে চিনে ফেলল।
সে নিশ্চিত হলো, এই বালকবিহারেসার হারানো পুত্র জায়েদ। তাই তারা বিষয়টি হারেসাকে জানাবে বলে ভাবল। হজ্ব সেরে লোকেরা বাড়িতে ফিরে হারেসাকে সব কথা খুলে বলল। প্রাণপ্রিয় পুত্র জায়েদের খবর শুনে বাবা কালবিলম্ব না করে সে তড়িঘড়ি করে মক্কায় হাজির হলেন।
সোজা মহানবী (সাঃ)-এর বাড়ীতে গেলেন তিনি। তারপর মহানবী (সাঃ)-কে বললেন: দেখুন নবীজি! জায়েদ আমার ছেলে, আমি ওকে নিতে এসেছি। জায়েদকে দয়া করে ফিরিয়ে দিন। এজন্য যা মূল্য চান আমি তা দিতে প্রস্তুত আছি। জায়েদের জন্য কী মুক্তিপণ নেবেন মহানবী (সাঃ)! বরং তিনিই তো মানুষকে তাঁর সর্বস্ব বিলিয়ে দেন। জায়েদকে তিনি হাসিমুখে হারেসার হাতে তুলে দিলেন। হারেসা তো হতবাক। এত সহজে ছেলেকে ফিরে পাবেন, তা ছিল হারেসার কল্পনারও বাইরে।
ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য যখন হারেছা প্রস্তুত তখন
জায়েদ বেঁকে বসলেন। তিনি রাসুল (সাঃ)-কে ছেড়ে তিনি কোথাও যাবেন না। বাবা হারেসা জায়েদের অনড় অবস্থা দেখে হতাশ হলেন। পুত্রকে অনেক করে বুঝালেন। কিন্তু কিছুতেই কাজ হলো না। ফলে জায়েদ মহানবী (সাঃ)-এর কাছে থেকে গেলেন। দেখতে দেখতে জায়েদ বড় হলেন। নবীজি আপন চাচাতো বোন জয়নাবের সাথে তাঁর বিয়ে দিলেন। জায়েদের এক ছেলে জন্ম নিল। নাম রাখলেন উসামা। নবীজি উসামাকে খুব আদর করতেন।
নবীজি তাঁর প্রিয় নাতি হাসান-হোসেনের মতোই উসামাকে
ভালোবাসতেন।
মক্কা বিজয়ের দিনের ঘটনা। মহানবী (সাঃ) উঠে চড়ে মক্কা নগরীতে প্রবেশ করলেন। তখন তাঁর সাথে উটের পিঠে বসেছিলেন উসামা। তা থেকেই বোঝা যায়, রাসূল (সঃ) উসামাকে কতটা পছন্দ করতেন।
মহানবী (সাঃ) এর গভীর ভালোবাসা পেয়ে জায়েদ তার বাবা-মাকে পর্যন্ত ভুলে যেতে পেরেছিলেন। শুধু জায়েদ নন রাসূল (সাঃ) এর সহচর্যে আরো অনেকেরই জীবন বদলে গিয়েছিলো।