সুন্নাত নামাজের গুরুত্ব-
ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর সঙ্গে সঙ্গে কিছু মুসল্লি দ্রুত মসজিদ থেকে বের হয়ে যান। অনেক সময় ইমাম সাহেব বিশেষ করে জুমার নামাজের ফরজের পর মাইকে বলে দেন, সুন্নত নামাজ পড়ে মসজিদ ত্যাগের জন্য। তারপরও অনেকে মসজিদ ত্যাগ করেন। এসব মুসল্লি যেভাবে ফরজকে গুরুত্ব দেন, সেভাবে সুন্নত নামাজকে গুরুত্ব দেন না, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
-
ফরজ নামাজের পাশাপাশি সুন্নত নামাজেরও যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, যথাযথভাবে সঠিক পদ্ধতিতে গুরুত্ব সহকারে সুন্নত নামাজ আদায় করার মাধ্যমে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুপম আদর্শ অনুসরণ ও তার প্রতি অগাধ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সুন্নত নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়, কিয়ামতের দিন কারও ফরজ নামাজে ঘাটতি থাকলে, এ নামাজ দ্বারা মহান আল্লাহ সেই ঘাটতি পূরণ করবেন।
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে ও পরে ১২ রাকাত সুন্নত নামাজ রয়েছে। এগুলো হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সবসময় আদায় করতেন এবং সাহাবাদের আদায় করার নির্দেশ দিতেন। তবে কখনো কোনো বিশেষ কারণ ছাড়া তা আদায় করা থেকে বিরত থাকতেন না। অসংখ্য হাদিসে সুন্নত নামাজের ফজিলতের কথা বলা হয়েছে।
-
ফরজ নামাজের আগে-পরে সুন্নত নামাজগুলো আদায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। হাদিসে সেগুলোকে জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম বলা হয়েছে। হজরত উম্মে হাবিবা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দিনে রাতে ১২ রাকাত নামাজ পড়ে তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানানো হয়। জোহরের আগে চার রাকাত। পরে দুই রাকাত। মাগরিবের পরে দুই রাকাত। এশার পরে দুই রাকাত। ফজরের আগে দুই রাকাত।’ তিরমিজি : ৬৩৬২
-
ফরজ নামাজ শেষ করে সুন্নত নামাজ আদায় না করে কাতার থেকে উঠে আসা, একদিকে যেমন অন্য মুসল্লিদের ইবাদতে মগ্নতা ব্যাঘাত ঘটায়, নামাজের একাগ্রতা বিনষ্ট করে। অন্যদিকে নামাজ পড়তে আসা মুসলিম শিশুরাও এ ধারাটি অব্যাহত রাখতে শেখে। বড়দের দেখাদেখি তারাও এভাবে সংক্ষিপ্তভাবে নামাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। যা কোনোভাবেই উচিত নয়।
-
ইসলামি শরিয়তে সুন্নত ওই আদেশমূলক বিধানকে বলা হয়, যা ফরজ-ওয়াজিবের মতো অপরিহার্য নয়, তবে তা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়মিত আমল থেকে প্রমাণিত। সুন্নত দুই প্রকার : সুন্নতে মোয়াক্কাদা ও সুন্নতে জায়েদা। সুন্নতে মোয়াক্কাদা ওই সব কাজ, যেগুলো হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত এমনভাবে আমল করতেন যে তা ওজরবিহীন কখনো ছাড়তেন না। যথা পুরুষদের জামাতে নামাজ পড়া। এ ধরনের সুন্নতের বিধান হলো এসব সুন্নত ওজরবিহীন নিয়মিত ছেড়ে দেওয়া গোনাহ, তবে হঠাৎ বিশেষ প্রয়োজনে ছাড়তে পারবে। ওজরবিহীন এমন সুন্নত ত্যাগকারীকে তিরস্কার করা হবে, তবে তাকে ফাসেক বা কাফের বলা যাবে না। আত তাআরিফাতুল ফিক্বহিয়্যাহ : ৩২৮
-
সুন্নতে মোয়াক্কাদা ওয়াজিবের মতোই। অর্থাৎ ওয়াজিবের ব্যাপারে যেমন জবাবদিহি করতে হবে, তেমনি সুন্নতে মোয়াক্কাদার ক্ষেত্রে জবাবদিহি করতে হবে। তবে ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার জন্য সুনিশ্চিত শাস্তি পেতে হবে, আর সুন্নতে মোয়াক্কাদা ছেড়ে দিলে কখনো মাফ পেয়েও যেতে পারে। তবে শাস্তিও পেতে পারে। তাই ফরজ নামাজের আগে-পরের সুন্নতে মোয়াক্কাদার অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
সুন্নতে জায়েদা ওই সুন্নত, যার ওপর রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত আমল করলেও ওজরবিহীন মাঝেমধ্যে ছেড়ে দিতেন। এমন সুন্নতকে মুস্তাহাব, নফল ও মানদুব বলা হয়। এমন সুন্নতের বিধান হলো, তার ওপর আমল করা প্রশংসনীয় ও সওয়াবের কাজ, তবে বিনা প্রয়োজনে ওজরবিহীন ত্যাগকারীকে তিরস্কার করা যাবে না। যথা তাহাজ্জুদসহ অন্য নফল নামাজ। তবে এ ধরনের আমলগুলোর মধ্যে কোনো কোনো আমল অন্য আমলের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়। কোনো কোনো আলেমের মতে, মোস্তাহাব-নফলের চেয়ে সুন্নতে জায়েদা তুলনামূলক গুরুত্বপূর্ণ।