অন্যান্য টপিকআখিরাতইসলামিক খবরইসলামিক ঘটনাকবর জীবনফজিলত পূর্ণ দুয়া

*সূরা কাওছারের ফযিলত ও বিশ্লেষন-

  • সুরা আল-কাউছার। কোরআনুল কারিমের সবচেয়ে ছোট সুরা। আর এ সুরা নাজিলে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হৃদয়ের আনন্দ মুখের হাসিতে ফুটে ওঠে। তিন আয়াতের ছোট্ট সুরাটিতে নেয়ামতের ঘোষণা, কৃতজ্ঞতায় নামাজ ও কোরবানির নির্দেশ এবং তার সঙ্গে শত্রুতা পোষণকারীদের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। সুরাটি ছোট হলেও এর ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য অনন্য।

উচ্চারণ ও অর্থসহ সুরা আল-কাউছার

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ

‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ

ইন্না আ’ত্বাইনাকাল কাওছার।

নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাউছার দান করেছি।

فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ

ফাসাল্লি লিরাব্বিকা ওয়ানহার।

অতএব (কৃতজ্ঞতা প্রকাশে) আপনার রবের জন্য নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।

إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ

ইন্না শানিআকা হুওয়াল আবতার।

নিশ্চয়ই আপনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই হলো- (লেজকাটা) নির্বংশ।

  • সুরা আল-কাউছার পবিত্র নগরী মক্কায় অবতীর্ণ হয়। সুরাটির আয়াত সংখ্যা ৩। সুরাটিতে রয়েছে মহা পুরস্কারে ঘোষণা। তাইতো সুরাটির নামকরণ করা হয়েছে ‘কাউছার’। যার অর্থ প্রভূত কল্যাণ। সুরাটিতে ‘নাহার’ও বলা হয়। ছোট এই সুরাটির তেলাওয়াতে অসংখ্য সাওয়াব ও ফজিলত রয়েছে।

সুরাটির বৈশিষ্ট্য ও মূল বক্তব্য

  • আল্লাহ তাআলা যখন সুরা কাউছার নাজিল করেন ওই মুহূর্তে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক আনন্দিত হন। সাহাবায়ে কেরাম তাঁর পবিত্র চেহারা মোবারকে নূরানি হাসির ঝলক দেখতে পান।

  • রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনেক বেশি কল্যাণ দানের ঘোষণা এসেছে এ সুরায়। আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেছেন। কেয়ামতের দিন তাঁকে হাউজে কাউছার দান করার কথা বিশেষভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ হাউজে কাউছারের পানীয় হবে দুধেরচেয়ে সাদা এবং মধুরচেয়ে অধিকতর মিষ্ট। একবার যে হাউজে কাউছারের পানীয় পান করবে; সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না।

  • আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশে প্রিয় নবির প্রতি নামাজ আদায় করার এবং কোরবানি করার নির্দেশও এসেছে এ সুরায়।

  • এছাড়া হজরত রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছেলে সন্তানের ইন্তেকালের পর অবিশ্বাসীরা তাঁর প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ ও মন্তব্য করার প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ শেষ আয়াতে ঘোষণা করেছেন, ‘হে রাসুল! আপনার শত্রুরা হবে নির্বংশ, লেজকাটা। তারা ধ্বংস হবে; তাদের নাম-নিশানাও থাকবে না।

সুরা কাউছারের শানে নুজুল

  • হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনো করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে বসা ছিলেন। 

তিনি কিছুক্ষণ তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন। এরপর তিনি মুচকি হাসলেন।

আমরা আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার মুচকি হাসার/খুশি হওয়ার কারণ কী?

তিনি বললেন, এই মাত্র আমার প্রতি একটি সুরা নাজিল হয়েছে। তারপর তিনি বিসমিল্লাহ পড়ে সুরাটি তেলাওয়াত করলেন। এরপর বললেন, ‘তোমরা কি জান কাউছার কী?

তখন আমরা বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। তখন তিনি বললেন-

  • ‘কাউছার’ হলো জান্নাতের একটি নহর। এতে অনেক কল্যাণ আছে। যা আল্লাহ তাআলা আমাকে দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কেয়ামতের দিন ঐ হাউজে কাউছারের পাশেই আমার উম্মত অবতরণ করবে। হাউজে কাউছারের পাত্রের সঙখ্যা হবে আসমানের নক্ষত্রের সমান। কোনো কোনো বান্দাকে হাউজে কাউছার থেকে টেনে সরিয়ে দেওয়া হবে; তখন আমি আরজ করবো, হে পরওয়াদেগার! এ ব্যক্তি আমার উম্মত। তখন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হুকুম হবে, হে রাসুল! আপনি অবগত নন যে, আপনার পরে এ ব্যক্তি দ্বীনে কী কী নতুন বিষয় (বেদাআত) বের করেছে।’ (মুসলিম)

  • হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘কাউছার’ সেই অজস্র কল্যাণ যা আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দান করেছেন। কাউছার জান্নাতের একটি প্রস্রবণের নাম। এটি একটি নহর যা বেহেশতে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দান করা হবে।’

  • সুরা আল-কাউছার তেলাওয়াতের অন্যতম একটি ফজিলত হচ্ছে- এটি তেলাওয়াত করলে শত্রুর অনিষ্টতা থেকে মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে রক্ষা করবেন। নামাজের সঙ্গে পড়ার লক্ষ্যেও ছোট এই সরা শিখে নেয়া অনেক সহজ।

সুরা কাউছারের আমল

  • সুরা কাউছার যদি কেউ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এক হাজার বার তেলাওয়াত করে এবং এক হাজার বার দরূদ পড়ে; তবে আশা করা যায়; স্বপ্নে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জেয়ারত পেয়ে ধন্য হবে মুমিন।’ (তাফসিরে নুরুল কোরআন)

স্বপ্নে সুরা কাউছারের তেলাওয়াতের তাবির

  • যে ব্যক্তি স্বপ্নে দেখবে যে, সে সুরা কাউছার তেলাওয়াত করছে; তবে সে নেক আমল করা পছন্দ করবে এবং অধিকাংশ সম নেক আমলেই রত থাকবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অর্থসহ সঠিক উচ্চারণে সুরাটি শিখে নেওয়ার তাওফিক দান করুন। সুরার বৈশিষ্ট্য, সুসংবাদ, ফজিলত ও আমলগুলোর উপকারিতা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। কোরআন অনুযায়ী জীবন গঠনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button