হুসাইন যুদ্ধ পার্ট ২
শত্রু পক্ষের গোয়েন্দা (سِلَاحُ اِسْتِكْشَافِ الْعَدُوِّ):
এরপর মালিকের ঐ গোয়েন্দা আসলে যাদের প্রেরণ করা হয়েছিল মুসলিমগণের অবস্থা ও অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ খবর সংগ্রহের উদ্দেশ্য তারা প্রত্যাবর্তন করল। তাদের এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল যে, তাদের হাত,পা এবং দেহের বিভিন্ন অঙ্গের সন্ধিস্থলেও চিড় ধরে গিয়েছিল। তাদের এ অবস্থা দেখে মালিক বলল, ‘তোমরা ধ্বংস হও, তোমাদের এ কী অবস্থা হয়েছে? তারা বলল, ‘আমরা যখন কিছু সংখ্যক সাদা-কালো মিশ্রিত ঘোড়ার উপর সাদা মানুষ দেখেছি, আল্লাহর কসম! তখন থেকে আমাদের এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যা তুমি প্রত্যক্ষ করছ।’
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর গোয়েন্দা (سِلَاحُ اِسْتِكْشَافِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ):
এদিকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-ও শত্রুদের অবস্থানের খবর প্রাপ্ত হয়ে আবূ হাদরাদ আসলামী (রাঃ)-কে এ নির্দেশ প্রদান করে প্রেরণ করলেন যে, মানুষের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে অবস্থান করবে এবং তাদের সঠিক খোঁজ খবর নিয়ে প্রত্যাবর্তনের পর তা তাঁকে অবহিত করবে।’ প্রাপ্ত নির্দেশ মোতাবেক তিনি তাই করলেন।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মক্ক হতে হুনাইনের পথে (الرَّسُوْلُ ﷺ يُغَادِرُ مَكَّةَ إِلٰى حُنَيْنٍ):
৮ম হিজরীর ৬ই শাওয়াল দিবস রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মক্কা হতে রওয়ানা হলেন। এটি ছিল মক্কা আগমনের ঊনিশতম দিবস। নাবী কারীম (সাঃ)-এর সঙ্গে ছিল বার হাজার সৈন্য। মক্কা বিজয়ের সময় তিনি সঙ্গে এনেছিলেন দশ হাজার সৈন্য এবং মক্কার নও মুসলিমগণের মধ্য হতে সংগ্রহ করেছিলেন আরও দু’ হাজার সৈন্য। এ যুদ্ধের জন্য নাবী কারীম (সাঃ) সফওয়ান বিন উমায়েরের নিকট হতে একশ লৌহ বর্ম নিয়েছিলেন এবং আত্তাব বিন উসাইদকে মক্কার গভর্ণর নিযুক্ত করেছিলেন।
দুপুরের পর এক ঘোড়সওয়ার এসে খবর দিলেন যে, ‘আমি অমূক অমূক পর্বতের উপর আরোহণ করে প্রত্যক্ষ করলাম যে, বনু হাওয়াযিন গোত্র গাট্টি বোচকাসহ যুদ্ধের ময়দানে আগমন করেছে। মহিলা, শিশু, গবাদি সব কিছুই তাদের সঙ্গে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মৃদু হাসির সঙ্গে বললেন, (تِلْكَ غَنِيْمَةُ الْمُسْلِمِيْنَ غَدًا إِنْ شَاءَ اللهُ) ‘আল্লাহ চায় তো এর সব কিছুই গণীমত হিসেবে কাল মুসলিমগণের হাতে এসে যাবে।’ দিন শেষে রাতের বেলা আনাস বিন আবি মারসাদ গানাভী (রাঃ) স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নৈশ্য প্রহরীর দায়িত্ব পালন করেন।[1]
হুনাইন যাওয়ার পথে লোকজনেরা একটি বেশ বড় বড় আকারের সতেজ কুলের গাছ দেখতে পেল। তৎকালে এ গাছকে যাতো আনওয়াত বলা হত। আরবের মুশরিকগণ এর উপর নিজেদের অস্ত্র শস্ত্র ঝুলিয়ে রাখত, ওর নিকট পশু যবেহ করত, মন্দির তৈরি করত, এবং মেলা বসাত। মুসলিম বাহিনীর মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক সৈন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বললেন, ‘আমাদের জন্য আপনি যাতো আনওয়াত তৈরি করে দিন যেমনটি তাদের জন্য রয়েছে।’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন,
(اللهُ أَكْبَرُ، قُلْتُمْ وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ كَمَا قَالَ قَوْمُ مُوْسٰي: اِجْعَلْ لَنَا إِلٰهًا كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ، قَالَ: إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُوْنَ، إِنَّهَا السَّنَنُ، لَتَرْكَبُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ).
‘আল্লাহ আকবার! সে সত্তার শপথ!যাঁর হাতে রয়েছে আমার জীবন তোমরা ঠিক সেরূপ কথা বলেছ, যেমন বলেছিল মুসা (আঃ)-এর কওম, ‘ইজ্আল লানা ইলা হান, কামা লাহুম আ লিহাহ’ (আমাদের জন্য উপাস্য তৈরি করে দিন যেমন তাদের জন্য উপাস্য রয়েছে 🙂 এটাই রীতিনীতি। তোমরাও পূর্বের রীতিনীতির উপর অবশ্যই আরোহণ করে বসবে।[2]