হুসাইন যুদ্ধ পার্ট ৪
শত্রুদের শোচনীয় পরাজয় (اِنْكِسَارُ حِدَةِ الْعَدُوِّ وَهَزِيْمَتُهُ السَاحِقَةُ):
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মাটি নিক্ষেপের কিছুক্ষণের মধ্যেই শত্রুদের পরাজয়ের ধারা সূচিত হয়ে গেল এবং আরও কিছুক্ষণ অতিবাহিত হতে না হতেই তারা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হল। সাক্বীফের সত্তর জন লোক নিহত হল এবং তাদের সঙ্গে যা কিছু সম্পদ অস্ত্র-শস্ত্র, মহিলা, শিশু এবং গবাদি ছিল সবই মুসলিমগণের হস্তগত হল। এটাই হচ্ছে সে পরিবর্তন, যে সম্পর্কে আল্লাহ সুবাহানাহু তা‘আলা কুরআনে ইঙ্গিত করেছেন,
{وَيَوْمَ حُنَيْنٍ إِذْ أَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنكُمْ شَيْئًا وَضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُم مُّدْبِرِيْنَ ثُمَّ أَنَزلَ اللهُ سَكِيْنَتَهُ عَلٰى رَسُوْلِهِ وَعَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَأَنزَلَ جُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَا وَعذَّبَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَذَلِكَ جَزَاء الْكَافِرِيْنَ} [التوبة:25، 266]
‘হুনায়নের যুদ্ধের দিন, তোমাদের সংখ্যার আধিক্য তোমাদেরকে গর্বে মাতোয়ারা করে দিয়েছিল, কিন্তু তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি, যমীন তার বিশালতা নিয়ে তোমাদের কাছে সংকীর্ণই হয়ে গিয়েছিল, আর তোমরা পিছন ফিরে পালিয়ে গিয়েছিলে। তারপর আল্লাহ তাঁর রসূলের উপর, আর মু’মিনদের উপর তাঁর প্রশান্তির অমিয়ধারা বর্ষণ করলেন, আর পাঠালেন এমন এক সেনাবাহিনী যা তোমরা দেখতে পাওনি, আর তিনি কাফিরদেরকে শাস্তি প্রদান করলেন। এভাবেই আল্লাহ কাফিরদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকেন।’ [আত তাওবাহ (৯) : ২৫-২৬]
পশ্চাদ্ধাবন (حَرْكَةُ الْمُطَارَدَةِ):
পরাজিত হওয়ার পর শত্রুদের একটি দল ত্বায়িফ অভিমুখে চলে যায়। অন্য একটি দল নাখলার দিকে পলায়ন করে, অধিকন্তু অন্য একটি দল আওতাসের পথ ধরে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আবূ ‘আমর আশ’আরী (রাঃ)-এর নেতৃত্বে একটি পশ্চাদ্ধাবনকারী দল আওতাসের দিকে প্রেরণ করেন। উভয় দলের মধ্যে সামান্য সংঘর্ষের পর মুশরিক দল পলায়নে উদ্যত হল। তবে এ সংঘর্ষে দলনেতা আবূ ‘আমির আশ’আরী (রাঃ) শহীদ হয়ে যান।
মুসলিম ঘোড়সওয়ারদের একটি দল নাখলার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী মুশরিকদের পশ্চাদ্ধাবন করেন এবং দোরাইদ বিন মিম্মাহকে পাকড়াও করেন যাকে রাবী’আহ বিন রাফী হত্যা করেন।
পরাজিত মুশরিকগণের তৃতীয় এবং সব চাইতে বড় দলটির পশ্চাদ্ধাবন ক’রে যাঁরা ত্বায়িফের পথে গমন করেন যুদ্ধ লব্ধ সম্পদ একত্রিত করার পর স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-ও তাঁদের সঙ্গে যাত্রা করেন।
গণীমত বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ (الْغَنَائِمُ):
গণীমতের মধ্যে ছিল যুদ্ধ বন্দী ছয় হাজার উট চবিবশ হাজার, বকরি, চল্লিশ হাজারেও বেশী ছিল এবং রৌপ্য চার হাজার উকিয়া (অর্থাৎ এক লক্ষ ষাট হাজার দিরহাম যার পরিমাণ ছয় কুইন্টালের কয়েক কেজি কম হয়)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সকল সম্পদ একত্রিত করার নির্দেশ প্রদান করেন। অতঃপর সেগুলো জেয়েররানা নামক স্থানে জমা রেখে মাসউদ বিন ‘আমর গিফারীকে তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করেন। ত্বায়িফ যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন এবং অবসর না হওয়া পর্যন্ত তিনি গণীমত বন্টন করেন নি।
যুদ্ধ বন্দীদের মধ্যে ছিল রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দুধ বোন শায়মা বিনতে হারিস। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট আনীত হয়ে সে নিজ পরিচয় পেশ করলে তিনি তার একটি পরিচিত চিহ্নের মাধ্যমে তাকে সহজেই চিনতে পারলেন এবং নিজ চাদর বিছিয়ে তার উপর সসম্মানে বসালেন। অতঃপর তাকে তার কওমের নিকট ফেরত পাঠালেন।