Advertisement
কেয়ামতের আলামত

৯. কিয়ামতের সর্বশেষ আলামত – কেয়ামতের বড় আলামত

কিয়ামতের পূর্বে ইয়ামানের আদন নামক স্থানের গর্ত থেকে একটি ভয়াবহ আকারের আগুন বের হয়ে মানুষকে হাশরের দিকে একত্রিত করবে।

Advertisement

এ ব্যাপারে কতিপয় সহীহ হাদীছ নিম্নে বর্ণিত হলোঃ

১) মুসলিম শরীফে হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ

اطَّلَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْنَا وَنَحْنُ نَتَذَاكَرُ فَقَالَ مَا تَذَاكَرُونَ قَالُوا نَذْكُرُ السَّاعَةَ قَالَ إِنَّهَا لَنْ تَقُومَ حَتَّى تَرَوْنَ قَبْلَهَا عَشْرَ آيَاتٍ فَذَكَرَ الدُّخَانَ وَالدَّجَّالَ وَالدَّابَّةَ وَطُلُوعَ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَنُزُولَ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَأَجُوجَ وَمَأْجُوجَ وَثَلَاثَةَ خُسُوفٍ خَسْفٌ بِالْمَشْرِقِ وَخَسْفٌ بِالْمَغْرِبِ وَخَسْفٌ بِجَزِيرَةِ الْعَرَبِ وَآخِرُ ذَلِكَ نَارٌ تَخْرُجُ مِنَ الْيَمَنِ تَطْرُدُ النَّاسَ إِلَى مَحْشَرِهِمْ

‘‘একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে আগমণ করলেন। আমরা তখন কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেনঃ যত দিন তোমরা দশটি আলামত না দেখ তত দিন কিয়ামত হবেনা। (১) ধোঁয়া (২) দাজ্জালের আগমণ (৩) ভূগর্ভ থেকে নির্গত দাববাতুল/দাব্বাতুল আরদ্ নামক অদ্ভুদ এক জানোয়ারের আগমণ (৪) পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় (৫) ঈসা ইবনে মারইয়ামের আগমণ (৬) ইয়াজুজ-মা’জুজের আবির্ভাব (৭) পূর্বে ভূমি ধসন (৮) পশ্চিমে ভূমি ধসন (৯) আরব উপদ্বীপে ভূমি ধসন (১০) সর্বশেষে ইয়ামান থেকে একটি আগুন বের হয়ে মানুষকে সিরিয়ার দিকে হাঁকিয়ে নিবে’’।[1]

(২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

وَنَارٌ تَخْرُجُ مِنْ قُعْرَةِ عَدَنٍ تَرْحَلُ النَّاسَ

‘‘আদনের গর্ত থেকে ভয়াবহ একটি আগুন বের হবে যা মানুষকে হাঁকিয়ে নিবে’’।[2]

৩) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ

سَتَخْرُجُ نَارٌ مِنْ حَضْرَمَوْتَ أَوْ مِنْ بَحْرِ حَضْرَمَوْتَ قَبْلَ يَوْمِ الْقِيَامَةِ تَحْشُرُ النَّاسَ

‘‘কিয়ামতের পূর্বে ইয়ামানের ‘হাযরামাওত’ অথবা ‘হাযরামাওত’এর সাগর থেকে একটি আগুন বের হয়ে মানুষদেরকে একত্রিত করবে’’।[3]

আরও পরুনঃ ইমাম মাহদীর আগমন – কেয়ামতের বড় আলামত

আরও পরুনঃ দাজ্জালের আগমন – কিয়ামতের বড় আলামত

মানুষকে কোথায় একত্রিত করা হবে?

   আখেরী যামানায় ইয়ামানের আদনের গর্ত থেকে আগুনটি বের হয়ে সকল মানুষকে হাশরের দিকে হাঁকিয়ে নিবে। হাশরের স্থান হবে শাম দেশ। তৎকালে সিরিয়া, ফিলিস্তীন, লেবানন এবং জর্ডান অঞ্চল শাম দেশ হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। এমর্মে অনেক সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।

১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

هَاهُنَا تُحْشَرُونَ هَاهُنَا تُحْشَرُونَ هَاهُنَا تُحْشَرُونَ ثَلَاثًا رُكْبَانًا وَمُشَاةً وَعَلَى وُجُوهِكُمْ فَأَشَارَ بِيَدِهِ إِلَى الشَّام

‘‘তোমাদেরকে এখানে একত্রিত করা হবে তোমাদেরকে এখানে একত্রিত করা হবে, তোমাদেরকে এখানে একত্রিত করা হবে, কথাটি তিনবার বললেন। আরোহিত অবস্থায়, পদব্রজে এবং মুখের উপর টেনে-হিচঁড়ে একত্রিত করা হবে। অতঃপর তিনি শামের দিকে ইঙ্গিত করলেন’’।[4]

২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

الشَّامِ أَرْضُ المَحْشَرِ وَ الْمَنْشَرِ

‘‘শাম হলো হাশর ও পুনরুত্থানের স্থান’’।[5]

৩) ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) বলেনঃ শামের যমীন হাশরের মাঠ হওয়ার ব্যাপারে যে ব্যক্তি সন্দেহ পোষণ করবে সে যেন সূরা হাশরের প্রথম কয়েকটি আয়াত পাঠ করে। বনী নযীরের ইহুদীরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করল তখন তিনি তাদেরকে বললেনঃ ‘‘তোমরা মদ্বীনা থেকে বের হয়ে যাও। তারা বললোঃ আমরা কোথায় যাবো? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ হাশরের যমীনের দিকে।[6] অর্থাৎ তিনি তাদেরকে শামের দিকে বিতাড়িত করলেন এবং শামকে হাশরের যমীন হিসেবে ব্যক্ত করলেন।

৪) হাফেজ ইবনে রজব বলেনঃ আখেরী যামানায় কিয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে যখন শুধু নিকৃষ্ট লোকেরাই অবশিষ্ট থাকবে তখন বিরাট একটি আগুন বের হয়ে মানুষকে শামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে তথায় একত্রিত করবে।[7] 

 মানুষকে হাঁকিয়ে নেয়ার অবস্থা সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ  

يُحْشَرُ النَّاسُ عَلَى ثَلَاثِ طَرَائِقَ رَاغِبِينَ رَاهِبِينَ وَاثْنَانِ عَلَى بَعِيرٍ وَثَلَاثَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَأَرْبَعَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَعَشَرَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَيَحْشُرُ بَقِيَّتَهُمُ النَّارُ تَقِيلُ مَعَهُمْ حَيْثُ قَالُوا وَتَبِيتُ مَعَهُمْ حَيْثُ بَاتُوا وَتُصْبِحُ مَعَهُمْ حَيْثُ أَصْبَحُوا وَتُمْسِي مَعَهُمْ حَيْثُ أَمْسَوْا

‘‘মানুষকে তিনভাবে একত্রিত করা হবে। (১) একদল লোককে আশা ও ভয় মিশ্রিত অবস্থায় হাঁকিয়ে নেয়া হবে। (২) দু’জনকে একটি উটের উপর, তিনজনকে একটি উটের উপর, চারজনকে একটি উটের উপর এবং দশজনকে একটি উটের উপর আরোহিত অবস্থায় হাশরের দিকে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। (৩) বাকী সব মানুষকে আগুন হাঁকিয়ে নিবে। মানুষ যেখানে দুপুরের বিশ্রাম নেয়ার জন্যে অবস্থান করবে আগুনও সেখানে থেমে যাবে। মানুষ যে স্থানে রাত অতিবাহিত করার  জন্যে অবস্থান করবে আগুনও সেখানে থেমে যাবে। এরপর আবার তাদেরকে নিয়ে চলবে। তারা যেখানে সকাল করবে আগুনও সেখানে সকাল করবে। তারা যেস্থানে বিকালে অবস্থান করবে আগুনও সেস্থানে অবস্থান করবে। এরপর আবার তাদেরকে হাঁকিয়ে নিবে।[8] অন্য বর্ণনায় এসেছে, আদনের গর্ত হতে একটি আগুন বের হয়ে মানুষকে বেষ্টন করে নিবে। চতুর্দিক থেকে তাদেরকে হাশরের মাঠের দিকে হাঁকিয়ে নিবে। যে পিছিয়ে থাকবে আগুন তাকে জ্বালিয়ে ফেলবে।[9] এই আগুনটি সর্বশেষে যাদেরকে হাঁকিয়ে নিবে তারা হলো মুযায়না গোত্রের দু’জন রাখাল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

يَتْرُكُونَ الْمَدِينَةَ عَلَى خَيْرِ مَا كَانَتْ لَا يَغْشَاهَا إِلَّا الْعَوَافِ يُرِيدُ عَوَافِيَ السِّبَاعِ وَالطَّيْرِ وَآخِرُ مَنْ يُحْشَرُ رَاعِيَانِ مِنْ مُزَيْنَةَ يُرِيدَانِ الْمَدِينَةَ يَنْعِقَانِ بِغَنَمِهِمَا فَيَجِدَانِهَا وَحْشًا حَتَّى إِذَا بَلَغَا ثَنِيَّةَ الْوَدَاعِ خَرَّا عَلَى وُجُوهِهِمَا

‘‘মদ্বীনা ভাল হওয়া সত্ত্বেও লোকেরা তা থেকে চলে যাবে। তারা চলে যাওয়ার পর হিংস্র পশু-পাখিরাই কেবল তাতে আশ্রয় নিবে। সর্বশেষে যে দু’জন লোককে হাঁকিয়ে নেয়া হবে তারা হলো মুযায়না গোত্রের দু’জন রাখাল। তারা ছাগলের পাল নিয়ে মদ্বীনার দিকে আসতে থাকবে। মদ্বীনার কাছে এসে দেখবে হিংস্র পশু-পাখিরা মদ্বীনাতে বসবাস শুরু করেছে। ‘ছানিয়াতুল ওয়াদা’ নামক স্থানে পৌঁছার পর তারা মুখের উপর উপুড় হয়ে পড়ে যাবে’’।[10] চেহারার উপর পড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে,

فَيَنْزِل إِلَيْهِمَا مَلَكَانِ فَيَسْحَبَانِهِمَا عَلَى وُجُوههمَا حَتَّى يُلْحِقَاهُمَا بِالنَّاسِ

‘‘তাদের দুজন যেহেতু পিছনে পড়েছে, তাই দু’জন ফেরেশতা আগমণ করে তাদের চেহারার উপর উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে শামের দিকে চলমান মানুষের সাথে মিলিয়ে দিবে’’।[11]

এ হাশরটি হবে দুনিয়াতেঃ

   উপরের হাদীছগুলোতে শাম দেশের যমিনে যে হাশরের আলোচনা করা হয়েছে তা পরকালের হাশর নয়, যা সংঘটিত হবে কবর থেকে পুনরুত্থানের পর; বরং এটি হবে কিয়ামতের একটি আলামত। এ হাশরের সময় জীবিত সমস্ত মানুষকে শামদেশের যমিনে আগুনের মাধ্যমে হাঁকিয়ে একত্রিত করা হবে। অধিকাংশ আলেম একথার উপর ঐক্যমত পোষণ করেছেন। সহীহ হাদীছগুলো এ কথারই প্রমাণ বহন করে।

   ইমাম নববী (রঃ) বলেনঃ আলেমদের কথা হলো এই হাশরটি দুনিয়ার শেষ বয়সে কিয়ামতের ও শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার পূর্বে সংঘটিত হবে। শাম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই হাশর হবে।

   ইসরাফীলের শিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার সাথে সাথে কিয়ামত হবার পর কবর থেকে উঠে যে হাশরের মাঠের দিকে লোকেরা দৌড়িয়ে যাবে তার ধরণ শামদেশে হাশরের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে। যার সামান্য বিবরণ কিছুক্ষণ পর প্রদান করা হবে। শামদেশে হাশরের অবস্থার বিবরণ আবূ হুরায়রা (রাঃ)এর হাদীছ থেকে জানা যায় যে, মানুষকে তিনভাবে একত্রিত করা হবে। (১) একদল লোককে আশা ও ভয় মিশ্রিত অবস্থায় হাঁকিয়ে নেয়া হবে। (২) দু’জনকে একটি উটের উপর, তিনজনকে একটি উটের উপর, চারজনকে একটি উটের উপর এবং দশজনকে একটি উটের উপর আরোহিত অবস্থায় হাশরের দিকে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। (৩) বাকী সব মানুষকে আগুন হাঁকিয়ে নিবে। মানুষ যেখানে দুপুরের বিশ্রাম নেয়ার জন্যে অবস্থান করবে আগুনও সেখানে থেমে যাবে। মানুষ যেস্থানে রাত অতিবাহিত করার  জন্যে অবস্থান করবে আগুনও সেখানে থেমে যাবে। এরপর আবার তাদেরকে নিয়ে চলবে। তারা যেখানে সকাল করবে আগুনও সেখানে সকাল করবে। তারা যে স্থানে বিকালে অবস্থান করবে আগুনও সে স্থানে অবস্থান করবে। এরপর আবার তাদেরকে হাঁকিয়ে নিবে।[12]

   এ ছাড়া আরো অনেক সহীহ হাদীছ থেকে জানা যায় আদনের গর্ত থেকে নির্গত আগুনের হাশর হবে দুনিয়াতে এবং তার স্থান হবে বর্তমান সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান ও ফিলিস্তীনের বিভিন্ন অঞ্চল।

   উপরের হাদীছ এবং অন্যান্য সহীহ হাদীছ থেকে আরো জানা যাচ্ছে, এই হাশরের পরও আরোহন, পানাহার, নিদ্রা, মৃত্যু ইত্যাদি বর্তমান থাকবে।

   আর পুনরুত্থানের পর যে হাশর হবে তাতে আরোহন, ক্রয়-বিক্রয়, পানাহার, মৃত্যু, নিদ্রা, পোষাক-পরিচ্ছদ ও পার্থিব জীবনের কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবেনা। শুধু তাই নয়; পরকালের হাশরের ব্যাপারে হাদীছের বিবরণ হলো মুমিন-কাফেরসহ সকল মানুষ হাশরের মাঠে খালী পা, উলঙ্গ শরীর, খাতনাবিহীন এবং সম্পূর্ণ নিঁখুত অবস্থায় একত্রিত হবে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

إِنَّكُمْ مَحْشُورُونَ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا ثُمَّ قَرَأَ كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ وَأَوَّلُ مَنْ يُكْسَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِبْرَاهِيمُ

‘‘নিশ্চয়ই তোমাদেরকে হাশরের মাঠে একত্রি করা হবে, খালী পা, উলঙ্গ এবং খাতনাবিহীন অবস্থায়। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ

)كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ( 

‘‘যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করবো। আমার ওয়াদা নিশ্চিত, আমাকে পূর্ণ করতেই হবে। (সূরা আম্বীয়াঃ ১০৪) কিয়ামতের দিন ইবরাহীম (আঃ)কে সর্বপ্রথম কাপড় পরিধান করানো হবে।[13]

   সারকথা উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো এখানে হাশর বলতে দুনিয়ার হাশরকে বুঝানো হয়েছে। কিয়ামতের অল্পকাল পূর্বে তা দুনিয়াতেই অনুষ্ঠিত হবে।

পরকালের হাশরঃ 

   উভয় প্রকার হাশরের মধ্যকার পার্থক্যটি যাতে পাঠকদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যায় সেজন্যে এখানে পরকালের হাশরের কিছু দৃশ্য তুলে ধরা হলোঃ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

)يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ وَبَرَزُوا لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ(

‘‘সেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ যমনীকে অন্য যমিন দ্বারা এবং পরিবর্তিত করা হবে আসমান সমূহকেও এবং লোকেরা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে হাজির হবে। (সূরা ইবরাহীমঃ ৪৮) সেদিন হাশরের মাঠের মাটির অবস্থা সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى أَرْضٍ بَيْضَاءَ عَفْرَاءَ كَقُرْصَةِ نَقِيٍّ لَيْسَ فِيهَا مَعْلَمٌ لِأَحَدٍ

‘‘কিয়ামতের দিন সাদা ময়দার রুটির মত চকচকে একটি মাঠের উপর সমস্ত মানুষকে একত্রিত করা হবে। সেখানে কারও কোন নিশানা থাকবেনা’’।[14] হাশরের মাঠে প্রত্যেক মানুষ মহা ব্যস্ততায় থাকবে। আল্লাহ তাআলা  বলেনঃ

)يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ(

‘‘হে লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই কিয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ঙ্কর ব্যাপার। সে দিন তোমরা দেখতে পাবে প্রত্যেক স্তন্যদায়ী তার দুধের শিশুকে ভুলে গেছে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলা তার গর্ভের সন্তান প্রসব করে দিবে আর আপনি মানুষকে মাতাল অবস্থায় দেখতে পাবেন। অথচ তারা মাতাল নয়। বস্ত্ততঃ আল্লাহর আযাব খুবই কঠিন’’। (সূরা হজ্জঃ ১-২) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

)فَإِذَا جَاءَتْ الصَّاخَّةُ يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ أَخِيهِ وَأُمِّهِ وَأَبِيهِ وَصَاحِبَتِهِ وَبَنِيهِ لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَأْنٌ يُغْنِيهِ(

‘‘অতঃপর যখন কর্ণ বিদারক আওয়াজ আসবে সেদিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাইয়ের কাছ থেকে। তার মাতা, তার পিতা, তার পত্মী এবং তার সন্তানদের কাছ থেকে। সেদিন প্রত্যেকেই নিজের চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে’’। (সূরা আবাসাঃ ৩৩-৩৭) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত,

أَنَّهَا ذَكَرَتِ النَّارَ فَبَكَتْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا يُبْكِيكِ قَالَتْ ذَكَرْتُ النَّارَ فَبَكَيْتُ فَهَلْ تَذْكُرُونَ أَهْلِيكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَّا فِي ثَلَاثَةِ مَوَاطِنَ فَلَا يَذْكُرُ أَحَدٌ أَحَدًا عِنْدَ الْمِيزَانِ حَتَّى يَعْلَمَ أَيَخِفُّ مِيزَانُهُ أَوْ يَثْقُلُ وَعِنْدَ الْكِتَابِ حِينَ يُقَالُ (هَاؤُمُ اقْرَءُوا كِتَابِيَهْ ) حَتَّى يَعْلَمَ أَيْنَ يَقَعُ كِتَابُهُ أَفِي يَمِينِهِ أَمْ فِي شِمَالِهِ أَمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِهِ وَعِنْدَ الصِّرَاطِ إِذَا وُضِعَ بَيْنَ ظَهْرَيْ جَهَنَّمَ

‘‘তিনি জাহান্নামের আগুনের কথা মনে করে কাঁদতে শুরু করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কাঁদছো কেন? তিনি বললেনঃ আমি জাহান্নামের কথা স্মরণ করে কাঁদছি। হাশরের মাঠে কি আপনার পরিবার ও আপনজনের কথা মনে রাখবেন? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেনঃ ‘‘তিনটি স্থান এমন রয়েছে, যেখানে কেউ কাউকে স্মরণ করবেনা (১) মানুষের আমল যখন মাপা হবে তখন মানুষ সব কিছু ভুলে যাবে। চিন্তা একটাই থাকবে তার নেক আমলের পাল্লা ভারী হবে না হালকা হবে (২) যখন আমলনামা দেয়া হবে তখন কেউ কাউকে স্মরণ করবেনা। আমলনামা ডান হাতে পাবে? না বাম হাতে পাবে? এ নিয়ে চিন্তিত থাকবে (৩) পুলসিরাত পার হওয়ার সময়ও সকলেই ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে। কেউ কাউকে স্মরণ করবেনা’’।[15] আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আরো বর্ণনা করেন যে,

يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ النِّسَاءُ وَالرِّجَالُ جَمِيعًا يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ قَالَ النبي صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا عَائِشَةُ الْأَمْرُ أَشَدُّ مِنْ أَنْ يَنْظُرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ

‘‘কিয়ামতের দিন নগ্নপদ, উলঙ্গ, এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় সমস্ত মানুষকে হাশরের মাঠে উপস্থিত করা হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারী-পুরুষ সকলকেই উলঙ্গ অবস্থায় উপস্থিত করা হবে? তাহলে তো মানুষেরা একজন অন্যজনের লজ্জাস্থানের দিকে তাকিয়ে থাকবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ব্যাপারটি একজন অন্যজনের দিকে তাকিয়ে থাকার চেয়ে অনেক ভয়াবহ হবে।[16] প্রত্যেকেই নিজের উপায় কি হবে তা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। একজন অন্যজনের লজ্জাস্থানের দিকে তাকানোর চিন্তাও করবেনা। হাশরের মাঠের একটি দিনের পরিমাণ হবে দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার  বছরের সমান। এ দিনের দীর্ঘতা দেখে মানুষ মনে করবে দুনিয়াতে তারা অতি সামান্য সময় বসবাস করেছিল। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

)تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ(

‘‘ফেরেশতাগণ এবং রূহ্ (জিবরীল আঃ) আললাহর দিকে উর্ধগামী হবেন এমন একদিন যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান’’। (সূরা মাআরিজঃ ৪)

আরও পরুনঃ ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) এর আগমণ – কেয়ামতের বড় আলামত

আরও পরুনঃ ইয়াজুয মাজুযের আগমন – কিয়ামতের বড় আলামত

]]>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button