অন্যান্য টপিকনবীদের জীবনী

উহুদের যুদ্ধ পার্ট ৯

কুরাইশের রাজনৈতিক চাল

যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছু পূর্বে কুরাইশরা মুসলিমগণের সারিতে বিচ্ছিন্নতা ও বিবাদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। এ উদ্দেশ্যে আবূ সুফইয়ান আনসারদের নিকট পয়গাম পাঠায়, ‘তোমরা আমাদের স্বগোত্রের লোকগুলোকে পরিত্যাগ করে সরে দাঁড়াও, আমরা তোমাদেরকে কিছুই বলব না, তোমাদের নগর আক্রমণ করব না এবং এখান থেকেই ফিরে যাব।’’ আবূ সুফইয়ানের এ জঘন্য প্রস্তাব শ্রবণ করা মাত্রই আনসারগণ ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠলেন এবং তাকে প্রচন্ডভাবে তিরস্কার ও ভৎর্সনা করতে লাগলেন।

উভয় সেনাবাহিনী একে অপরের নিকটবর্তী হলে কুরাইশরা তাদের পূর্বোক্ত উদ্দেশ্য সফল করার লক্ষ্যে অন্য এক চেষ্টা করল এবং তা হচ্ছে, মদীনার আউস বংশে আবূ ‘আমর নামক একজন যাজক বাস করত, তার নাম ছিল আবদি ‘আমর ইবনু সুফী। ইসলামের পূর্বে সে রাহিব’ (বনবাসী) আখ্যায় আখ্যায়িত ছিল। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার নাম রেখেছিলেন ‘ফাসিক’ (লম্পট)। অজ্ঞতার যুগে সে আউস গোত্রের সর্দার ছিল। কিন্তু, ইসলামের আবির্ভাব ঘটলে ওটা তার গলার ফাঁস হয়ে যায় এবং প্রকাশ্যভাবে সে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর শত্রুতায় লেগে পড়ে।

আউস ও খাযরাজ গোত্রের লোকেরা দলে দলে মুসলিম হয়ে যাচ্ছে দেখে সে কতগুলো লোককে সঙ্গে নিয়ে মক্কায় পালিয়ে যায় এবং সেখানে কুরাইশদের সাথে মুসলিমগণের বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। মদীনার এ প্রবীণ পুরোহিত কতিপয় দুর্ধর্ষ সৈন্য কর্তৃক পরিবেষ্টিত হয়ে সর্বপ্রথমে ময়দানে উপস্থিত হলো এবং আনসারদেরকে সম্বোধন করে উচ্চ কণ্ঠে বলতে লাগল, ‘হে মদীনার অধিবাসীরা। আমাকে চিনতে পারছ কি? আমি তোমাদের পুরোহিত আবূ আমির। তোমরা মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে ত্যাগ করে আমার সাথে যোগদান কর, তোমাদের কল্যাণ হবে।’ কিন্তু আনসারগণ এখন পুরোহিতদের প্রবঞ্চনার অতীত, তারা সমবেত কণ্ঠে উত্তর দিলেন, ‘দুর হ প্রবঞ্চক, তোর পৌরহিত্যের কোন ধার আমরা ধারি না, তোর অভিসন্ধি সিদ্ধ হবে না।’’ আবূ আমির কুরাইশদেরকে আশা দিয়ে বলেছিল, ‘আমি মদীনার পুরোহিত, যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হয়ে আমি একবার আহবান করলে মদীনাবাসীগণ সবাই আমার দলে যোগদান করবে।’’ কিন্তুু আনসারদের উত্তর শুনে সে বলতে লাগল, ‘দেখছি, আমার অবর্তমানে হতভাগারা একেবারে বিগড়ে গেছে। অতঃপর তার পৌরহিত্যের ক্ষুব্ধ অভিমান পুরাতন প্রতিহিংসার সাথে যোগ দিয়ে প্রচন্ড হয়ে উঠল এবং এ হতভাগাই সর্বপ্রথমে সদলবলে প্রস্তর ও বাণ বর্ষণের মাধ্যমে যুদ্ধের সূত্রপাত করে দিল এবং শেষে আক্রমণের উপযুক্ত প্রত্যুত্তর পেয়ে সরে দাঁড়াল। এভাবে কুরাইশদের পক্ষ হতে মুসলিমগণের কাতারে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করার দ্বিতীয় চেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে গেল। সংখ্যার আধিক্য ও সাজ-সরঞ্জামের প্রাচুর্য সত্ত্বেও মুশরিকগণ মুসলিমগণের ভয়ে কিরূপ ভীত হয়েছিল উপরের ঘটনা দ্বারা তা সহজেই অনুমান করা যায়।

যুদ্ধোন্মাদোনা ও উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য কুরাইশ মহিলাদের কর্ম তৎপরতা

এদিকে কুরাইশ মহিলারাও যুদ্ধে তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য তৎপর হয়ে উঠল। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল আবূ সুফইয়ানের স্ত্রী হিন্দা বিনতু ‘উতবাহ। এ মহিলারা সারিসমূহে ঘুরে ঘুরে ও দফ্ বাজিয়ে বাজিয়ে লোকদেরকে উত্তেজিত করল। কখনো কখনো তারা পতাকা বাহকদেরকে সম্বোধন করে বলত,

অর্থাৎ ‘দেখ, হে বনু আবদিদ্দার! দেখ, হে পশ্চাদ্ভাগের রক্ষকবৃন্দ। তরবারী দ্বারা খুব আঘাত কর।

উত্তেজিত করতে গিয়ে কখনো কখনো তারা বলত,

অর্থ: ‘যদি তোমরা অগ্রসর হতে পার তবে আমরা তোমাদেরকে আলিঙ্গন করব ও তোমাদের জন্যে শয্যা রচনা করব। আর যদি তোমরা পশ্চাদপদ হও তবে আমরা রুখে দাঁড়াব এবং তোমাদের  হতে চিরতরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker